ভোলার সদর উপজেলার বিচ্ছিন্ন এক ইউনিয়ন ভেদুরিয়া। বছরের শুরুতে ওই ইউনিয়নের চারটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় যে পরিমাণ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল, বছর শেষে তাদের মধ্যে দেড় শতাধিক ছাত্রী অনুপস্থিত। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এর মধ্যে শতাধিক ছাত্রীর বাল্যবিবাহ হয়ে গেছে। অভিভাবকেরা অভাব ও বখাটেদের উৎপাতের কারণে মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেন। ভেদুরিয়া ইউনিয়নে বাল্যবিবাহের অবস্থা ও প্রতিকার বিষয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসাইনের সঙ্গে।
ভেদুরিয়া ইউনিয়নে কি বাল্যবিবাহ বেড়েছে?
ইকবাল হোসাইন: না বাড়েনি, বরং কমেছে। আগে জন্মনিবন্ধন সনদ ছাড়া বিয়ে হতো। অভিযোগ আসত বেশি। এখন কম আসে। এ বছর দুটি অভিযোগ এসেছে। সেগুলো বন্ধ করার পরে আর খবর পাইনি।
ভেদুরিয়া ইউনিয়নে বাল্যবিবাহ বেশি না হলে ২০২৩ সালে এতগুলো মেয়ের বিয়ে হলো কীভাবে?
ইকবাল হোসাইন: আমি তো মাত্র দুটি বিয়ের অভিযোগ পেয়েছি। বেশির ভাগই অজানা থাকে। গোপন রাখা হয় হয়তো।
ভেদুরিয়া ইউনিয়নে কিশোর-কিশোরী ক্লাব আছে? থাকলে সেগুলোর কাজ কী?
ইকবাল হোসাইন: সেখানে চারটি কিশোর-কিশোরী ক্লাব আছে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, বয়ঃসন্ধিকালে নিজেকে ও অন্য বন্ধুদের সচেতন করা, শিশুর পানিতে পড়া প্রতিরোধ, সামাজিক নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন হতে শেখানো হয়ে তাদের। কিশোর–কিশোরী ক্লাবের সদস্যরা বাল্যবিবাহের জালে পা দেয় না। নিজেদের তারা এমনভাবে প্রস্তুত করে।
বাল্যবিবাহ বন্ধের উপায় কী?
ইকবাল হোসাইন: পরিবার, বাবা, মা, শিক্ষক ও সমাজের লোকজনকে সচেতন করা। আইনের ভয় দেখিয়ে বাল্যবিবাহ ভেঙে দিলে আরেক এলাকায় গিয়ে বিয়ে পড়িয়ে গোপন রাখেন। বাচ্চা হলে বাড়িতে ফিরে আসে। শিক্ষক ও জনপ্রতিনিধিরা চাইলে একটি বাল্যবিবাহও হবে না।
ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা ও কম্পিউটারের দোকান বাল্যবিবাহের ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করছে, এই অভিযোগ কতটা সঠিক?
ইকবাল হোসাইন: এ রকম অভিযোগ আমরাও পাই। ওই যে বলেছি, জনপ্রতিনিধি চাইলে সব বন্ধ হবে।
বাল্যবিবাহ বন্ধে কাজির ভূমিকা কী?
ইকবাল হোসাইন: তিনিই তো সব। তাঁর কাছে বাল্যবিবাহের ঘটনা এলে তিনি অভিভাবককে বুঝিয়ে বাল্যবিবাহ থেকে বিরত রাখবেন। কিন্তু হচ্ছে উল্টোটা।
কাজির একাধিক বালাম খাতা রাখা কি বৈধ? সেগুলো যাচাই করা হয়?
ইকবাল হোসাইন: কাজির একাধিক বালাম খাতা রাখার কোনো বৈধতা নেই। বৈধতা নেই সহ-কাজী নিয়োগেরও। এটা রেজিস্ট্রার দেখবেন। বালাম খাতা যাচাইয়ের বিষয়টি আমরা অভিযোগ পেলে করি। কিন্তু নিয়ম করে সেটি যাচাই করবেন জেলা রেজিস্ট্রার।
ভেদুরিয়া ইউনিয়নের অভিভাবকেরা বলছেন, বখাটেদের উৎপাত ও মুঠোফোনের কারণে মেয়েদের বাল্যবিবাহ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এটা কতটা সঠিক?
ইকবাল হোসাইন: এটা সত্য। উৎপাত বন্ধে শিক্ষকদের উচিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ও প্রশাসনের সহায়তা নেওয়া। অভিভাবকদের উচিত মেয়ে কীভাবে বিদ্যালয়ে যায়, কী করে, স্মার্টফোনে কী করে—এসবের খোঁজখবর রাখা।