কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় নজির হোসেন (৮০) নামে প্রবীণ এক নদীকর্মীর ওপর হামলা করে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিনিয়ে নিয়েছেন নদী দখলদারেরা। নজির হোসেন চাকিরপশার নদী সুরক্ষা কমিটির সদস্য।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলা সদর ইউনিয়নের বোতালারপাড় গ্রামে আঙ্গাধোয়া ব্রিজপাড় এলাকায় হামলার এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নজির হোসেন রাজারহাট থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
রাজারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম রেজা প্রথম আলোকে বলেন, সকালে চাকিরপশার এলাকার একজনের ওপর হামলা করা হয়েছে বলে ভুক্তভোগী থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজারহাটের চাকিরপশার নদীর বিভিন্ন স্থানে অবৈধ দখলদারেরা দখল করে রাখায় উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে উপজেলার প্রায় ২ হাজার ২০০ একর ফসলি জমির ফসল নষ্টের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এমতাবস্থায় আজ সকালে উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে নদীকর্মী নজির হোসেনকে ডাকেন। তিনি চাকিরপশার এলাকার জমির কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন। তখন নজির হোসেনকে দেখে দখলদারেরা খেপে যান এবং কৃষি কর্মকর্তাদের সামনে অবৈধ দখলদার ইলিয়াস আলী মণ্ডল, একরামুল হক এবং সুমি বেগম এলোপাতাড়ি কিলঘুষি, চড়থাপ্পড় মারতে থাকেন। পরে এলাকাবাসী ও অন্য নদীকর্মীরা নজির হোসেনকে দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করেন।
অভিযোগের বিষয় অবৈধ দখলদার ইলিয়াস আলী মণ্ডল, একরামুল হক ও সুমি বেগমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
রাজারহাট উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা হৈমন্তী রাণী প্রথম আলোকে বলেন, চাকিরপশার এলাকায় বাঁধের কারণে কৃষকের ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে তাঁদের কাছে একটি অভিযোগ এসেছিল। সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে আজ চাকিরপশায় ভুক্তভোগী কৃষকদের ডেকে কথা বলেন। আঙ্গাধোয়া ব্রিজ এলাকায় কৃষকেরা একটি জাল দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধের বিষয়টি জানানোর সময় কিছু লোক এসে কৃষকদের সঙ্গে তর্কে জড়ান। তখন তাঁরা সেখান থেকে চলে আসেন। পরে শুনেছেন, তাঁরা চলে আসার পর কৃষক নজির হোসেনের ওপর হামলা হয়েছে এবং তাঁর পাঞ্জাবি ছিঁড়ে দিয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যারা এসেছিল তারা দখলদার কি না জানি না। তাঁদের আমি সেখানে ডাকিনি।’
চাকিরপশার নদী সুরক্ষা কমিটির সমন্বয়ক ও রিভারাইন পিপলের পরিচালক অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের অবহেলা ও অবৈধ দখলদারদের পক্ষ নেওয়ায় দিনের পর দিন অবৈধ দখলদারেরা আন্দোলনকারীদের লাঞ্ছিত করার সাহস পাচ্ছেন। গতকাল সোমবার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) উত্তম কুমারের সামনে অবৈধ দখলদারেরা লিপি বেগম নামের একজন নদীকর্মীকে মারধরের হুমকি দিয়েছেন। আজ তাঁরা নজির হোসেনের ওপর হামলা চালিয়ে তাঁকে আহত করেছেন। হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় রেল ও সড়কপথ অবরোধ, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাওসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) উত্তম কুমার রায়ের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, রাজারহাটের চাকিরপশার দখল উচ্ছেদের নোটিশ তিনি জেলায় আসার আগেই দেওয়া ছিল। দুর্গাপূজার কারণে কিছুদিন কাজ করতে পারেননি। উচ্ছেদ অভিযানের জন্য গতকাল থেকে সরেজমিনে পরিদর্শন শুরু হয়েছে। খাল-বিল ও নদী থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে।