একমাত্র ছেলে প্রান্ত মিত্রের মৃত্যুতে মায়ের কান্না কিছুতেই থামছে না। আজ বুধবার দুপুরে ফরিদপুর সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের মালাঙ্গা গ্রামে
একমাত্র ছেলে প্রান্ত মিত্রের মৃত্যুতে মায়ের কান্না কিছুতেই থামছে না। আজ বুধবার দুপুরে ফরিদপুর সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের মালাঙ্গা গ্রামে

ফরিদপুরে কলেজছাত্রকে হত্যা

‘পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ সবচেয়ে ভারী, এ ভার বইবার ক্ষমতা আমার নেই’

একমাত্র ছেলে প্রান্ত মিত্রকে হারিয়ে দুচোখে অন্ধকার দেখছেন বাবা বিকাশ চন্দ্র মিত্র (৭০) ও মা পুতুল মিত্র (৬০)। কাঁদতে কাঁদতে বাবা বিকাশ মিত্র বলেন, ‘শোকেরও তো একটা ধরন আছে, এটা কোন ধরনের শোক। পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ সবচেয়ে ভারী, এ ভার বইবার ক্ষমতা আমার নেই।’

ফরিদপুর সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের মালাঙ্গা গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিকাশ মিত্রের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি বলেন, ‘কার কী ক্ষতি করেছিল আমার ছেলে? চিরকাল সমাজের জন্য কাজ করেছে, মানুষের উপকার করেছে। কারও রক্তের প্রয়োজন হলে রাত নেই দিন নেই, ছুটে গেছে। আমাদের কোনো বারণ শোনেনি।’

বন্ধুর বোনকে রক্ত দিতে রোববার দিবাগত রাত দুইটার দিকে শহরের ওয়্যারলেস পাড়া এলাকার বাড়ি থেকে ফরিদপুর ডা. জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালে যাওয়ার পথে আলীপুর সেতুর উত্তর পাশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রান্ত মিত্রকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বত্তরা। নিহত প্রান্ত ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজের সম্মান তৃতীয় বর্ষের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী ও হিন্দু ছাত্র পরিষদের রাজেন্দ্র কলেজ শাখার আহ্বায়ক ছিলেন।

প্রান্তর বাবা বিকাশ মিত্রের বাড়ি রাজবাড়ী জেলার পাচুড়িয়াতে। তবে দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে ফরিদপুর শহরে থাকেন। ১৫ বছর ধরে থাকেন শহরের ওয়ারলেস পাড়া এলাকার একটি ভাড়া বাসায়। ১৫ বছর ধরে এই বাড়িতেই আছে পরিবারটি। পাশে হাউজিং এস্টেট এলাকায় দিপশিখা নামে একটি কিন্ডারগার্টেন দেখভাল করেন বিকাশ মিত্র।

প্রান্তর মৃত্যুর পর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন পরিবারটির সদস্যরা। এ জন্য ছেলের শেষকৃত্য সম্পন্ন করে মঙ্গলবার রাতে তাঁরা চলে আসেন ফরিদপুর শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে কামানইপুর ইউনিয়নের মালাঙ্গা গ্রামে। এখানে বিকাশ মিত্র আপাতত উঠেছেন শ্বশুরবাড়িতে।

ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত কলেজছাত্র প্রান্ত মিত্র

বিকাশ মিত্র বলেন, ‘আমার ছেলেকে কারা হত্যা করল, কেন হত্যা করল, কী অপরাধ ছিল তার, আমি জানি না। আমরা দুই বুড়োবুড়ি এখন কী নিয়ে বাঁচব? আমি নিজেও হার্টের রোগী। কাঁদতে কাঁদতে ওর মা শয্যাশায়ী হয়ে গেছে। আমাদের এ সর্বনাশ কেন হলো?’ তিনি বলেন, ‘মানুষের দুঃখে প্রাণ কাঁদত প্রান্তর। রাস্তায় কেউ অভুক্ত থাকলে তাকে খাবার দিত। খোঁজ নিয়ে দেখত শহরের কোনো পাগল অভুক্ত আছে কি না। নিজের খাবার সে দিয়ে আসত। আমার সেই সোনার ছেলের এমন নির্মম মৃত্যু হলো। আমার বলার কোনো ভাষা নেই।’

কাঁদতে কাঁদতে শয্যাশায়ী হয়ে গেছেন প্রান্তর মা পুতুল মিত্র। তিনি বলেন, ‘আমার এত ভালো ছোয়ালডারে ক্যাডা মারলো। মাইনষের বিপদ দেখতে গিয়ে রক্ত দিতে গিয়ে জীবন দিল। আমার শুধু একটাই আশা, যারা আমার ছেলেরে মারছে, তাদের একবার দেখবার চাই, তাদের বিচার চাই।’

পুতুল মিত্র বলেন, ‘এমন কত ঘটনা তো ঘটে। কত ঘটনার বিচারও হয় না। আসল অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। খুনিরা আমার ছোয়ালরে রাইখা আমারে মাইরা গেলেও একটুও কষ্ট থাকত না।’