নোয়াখালীতে কৃতী শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসের কাছে হার মানল বৃষ্টিও

বৃষ্টি উপেক্ষা করে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেয় কৃতী শিক্ষার্থীরা। আজ সকালে নোয়াখালী জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে
ছবি: প্রথম আলো

টানা দুই দিন ধরে বৃষ্টি হয়েছিল নোয়াখালী জেলাজুড়ে। কিন্তু শরতের সেই বৃষ্টি আটকে রাখতে পারেনি অদম্য শিক্ষার্থীদের। তাদের উচ্ছ্বাসের কাছে শেষ পর্যন্ত বৃষ্টিই হার মেনেছে। বাইরে যখন থম ধরা আকাশ, ঝিরঝিরে বৃষ্টি, তখন নোয়াখালী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তন উৎসবের পরিবেশ। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ–৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা রাঙিয়ে তুলেছিল গোটা মিলনায়তন।

আজ শুক্রবার সকালে শিল্পকলা একাডেমি মিলন আয়তনে এমন আমেজেই শুরু হয় শিখো-প্রথম আলো কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা। অনুষ্ঠান শুরুর অনেক আগেই বৃষ্টিতে ভিজে মিলনায়তনে এসে হাজির হয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীতের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান।

নোয়াখালীর পাশাপাশি সারা দেশের ৬৪টি জেলায় পর্যায়ক্রমে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের উৎসব পাওয়ার্ড বাই বিকাশ। প্রথম আলো ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শিখোর আয়োজনে উৎসবে সহযোগিতা করছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।

এবারের উৎসবে জেলার ৬৫০ জন জিপিএ–৫ পাওয়া শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছিল। তবে উৎসবে যোগ দিয়েছে সাড়ে ৫০০ শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের অভিভাবক ও পরিবারের সদস্যরাও এসেছিলেন। সেলফি কর্নারে সেলফি তুলতেও ভোলেনি তাঁরা।
দিনব্যাপী সংবর্ধনায় শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট, প্রথম আলো ই-পেপার (১ মাস) ও চরকির (১৫ দিন) ফ্রি সাবস্ক্রিপশন, শিখোর সৌজন্যে বিনা মূল্যে কোর্স ও ফ্রেশ ব্র্যান্ডের স্ন্যাকস বক্স।

মিলনায়তনে অতিথি ও শিক্ষার্থীরা। আজ সকালে নোয়াখালী জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর নোয়াখালী নিজস্ব প্রতিবেদক এফ এ এম মাহবুবুর রহমান। অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও নোয়াখালী সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহাম্মদ কাজী রফিক উল্লাহ, প্রথম আলো চট্টগ্রাম অফিসের বার্তা সম্পাদক ওমর কায়সার, ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু জাফর মোহাম্মদ হারুন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল কাইয়ুম মাসুদ।

শিক্ষার্থীদের নিজেদের শিক্ষাজীবনের গল্প শোনান আয়েশা আক্তার, বিপ্লব আহমেদ ও তানিয়া ইমরোজ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বন্ধু সবার সভাপতি মাসুম বিল্লাহ সিফাত, সাধারণ সম্পাদক আসিফ আহমেদ। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বন্ধুসভার বন্ধুরা আবৃত্তি, নাচ ও গান পরিবেশন করেন।

নোয়াখালী বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মুহাম্মদ কাজী রফিক উল্লাহ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তোমাদের দৌড় কেবল শুরু হয়েছে। শুরুর দৌড় তোমাদের সর্বোচ্চ কৃতিত্বের অধিকারী করেছে। এর পেছনে কয়েক স্তরের মানুষের অবদান রয়েছে। এখন মূল্যবোধের বড় অভাব। তোমরা নৈতিক মূল্যবোধের দিকে খেয়াল রাখবে। তোমরা যদি নৈতিকভাবে ভালো না হতে পারো, কখনোই একজন ভালো মানুষ হতে পারবে না।’

উৎসবে আসা শিক্ষার্থী বিপ্লব আহমেদ দিনের বেলায় কাজ করে রাতে পড়ালেখা করে জিপিএ–৫ পেয়েছে। নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে সে বলেছে, সে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য কখনো বাবাকে সহযোগিতা করতে রিকশা চালিয়েছে, কখনো মাটি কেটেছে, কখনো ধান কেটেছে। কিন্তু পড়ালেখা থেকে বিচ্যুতি হয়নি সে।

প্রথম আলোর চট্টগ্রাম অফিসের বার্তা সম্পাদক ওমর কায়সার বলেন, ‘আজকের এই অনুষ্ঠানে এক অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী বন্ধুর কাছ থেকে আমরা জীবনের গল্প শুনতে পেয়েছি। এর চেয়ে প্রেরণার আর কিছু হতে পারে না। তোমরা জীবনের ছোট্ট একটি ধাপ পার হয়েছ। সামনে তোমাদের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ পার হতে হবে।’
অনুষ্ঠানে প্রথম আলো বন্ধুসভার পক্ষ থেকে অদম্য ও শিক্ষার্থীর বিপ্লব আহমেদের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ালেখার সব শিক্ষা উপকরণ সরবরাহের ঘোষণা দেওয়া হয়।