২০১৪ সালে পৌরসভা গঠন করা হয়। সদর ও কৈচাপুর ইউনিয়নের কিছু অংশ পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায় সীমানাসংক্রান্ত জটিলতার কারণে হালুয়াঘাট সদর ও কৈচাপুর ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ১২ বছর ধরে নির্বাচন হচ্ছে না। স্থানীয় লোকজন বলেন, দীর্ঘদিন নির্বাচন না হওয়ায় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে কোনো জবাবদিহি নেই। ইতিমধ্যে দুটি ইউপির কয়েকজন সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। ফলে তাঁরা ঠিকভাবে সেবা পাচ্ছেন না।
কৈচাপুর ইউপিতে এক যুগ ধরে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন জাহাঙ্গীর আলম। আর সদরে ইউপি সদস্য ইকরামুল হাসান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১২টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। ২০১৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর হালুয়াঘাট পৌরসভা গঠন করা হয়। এ সময় হালুয়াঘাট সদর ও কৈচাপুর ইউনিয়নের কিছু অংশ পৌরসভার সীমানায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এগুলো হলো সদর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর, আকনপাড়া, হালুয়াঘাট, কালিয়ানীকান্দা গ্রাম ও কৈচাপুর ইউনিয়নের নলুয়া, ইসলামপুর, হালুয়াঘাট বাজার পূর্ব, মনিকুড়া গ্রাম। ২০১৬ সালে বাকি ১০টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সদর ও কৈচাপুর ইউপি এখনো নির্বাচন হয়নি।
সদর ইউপির জনপ্রতিনিধিরা বলেন, ২০১৮ সালে হালুয়াঘাট সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালেহ আহম্মেদ তাঁর পদ থেকে অব্যাহতি নিয়ে পৌর নির্বাচনে অংশ নেন। এরপর ইউপি সদস্য ইকরামুল হাসানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আনিসুর রহমান ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন মারা গেছেন।
তা ছাড়া ১, ২ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সীমানা পৌরসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসব কারণে ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এবং সংরক্ষিত ১, ২, ৩ ও ৪, ৫, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নারী সদস্যরা কাগজে–কলমে বাদ পড়েছেন। মূলত একজন সংরক্ষিত নারী ও চারজন ইউপি সদস্য নিয়ে চলছে ইউনিয়ন পরিষদের কাজ।
ইউনিয়নের বাসিন্দা শরাফত আলী বলেন, পাঁচজন জনপ্রতিনিধি দিয়ে চলে সদর ইউনিয়ন পরিষদ। ফলে নাগরিকদের বিভিন্ন সেবা পেতে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। তাঁরা চান দ্রুত নির্বাচন দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হোক।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ইকরামুল হাসান বলেন, তাঁরা চান সব সমস্যা সমাধান করে দ্রুত নির্বাচন দেওয়া হোক।
অপর দিকে, ২০১১ সালের নির্বাচনে কৈচাপুর ইউপিতে জাহাঙ্গীর আলম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি এখনো দায়িত্ব পালন করছেন। গত বছর তাঁর ইউনিয়নে ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আমানউল্লাহ মারা গেছেন।
ইউনিয়নের তিনজন বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর সময় ধরে ভোট নেই। জনপ্রতিনিধিরা একক আধিপত্য বিস্তার করেছেন। চেয়ারম্যান ঠিকমতো পরিষদে আসেন না। সব ধরনের কর্মকাণ্ডে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নির্বাচন না হওয়ায় গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। আমিও তো এভাবে থাকতে চাই না। নির্বাচন হলে নতুন নতুন জনপ্রতিনিধি আসবেন। তবে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড ঠিকঠাকভাবেই চলছে। তবে সমস্যা সমাধান করে নির্বাচন দেওয়া দরকার।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জন কেনেথ রিছিল বলেন, ভূমি কার্যালয়ের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে গিয়ে সীমানা নির্ধারণের কাজ শেষ করা হয়েছে। নির্বাচন কার্যালয়ের মাধ্যমে দুটি ইউনিয়নের ওয়ার্ডভিত্তিক ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ করা হয়েছে। এখন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার কাজ চলছে। এই কাজ শেষ হলেই দুটি ইউনিয়নে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।