কক্সবাজার-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমল ও ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজান সাঈদ
কক্সবাজার-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমল ও ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজান সাঈদ

কক্সবাজার-৩ আসন

নৌকা ও ঈগল ঘিরে বিভক্ত আওয়ামী লীগ, সমানতালে চলছে প্রচারণা

কক্সবাজার সদর, রামু ও ঈদগাঁও উপজেলা নিয়ে কক্সবাজার-৩ সংসদীয় আসন। দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের সাইমুম সরওয়ার কমল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

তখন ঈদগাঁও উপজেলা, কক্সবাজার সদরের চৌফলদণ্ডী, খুরুশকুল, পিএমখালী, ঝিলংজা, ভারুয়াখালী ইউনিয়ন, রামুর ঈদগড়, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া, ফতেখাঁরকুল, রাজারকুল ইউনিয়ন এবং কক্সবাজার পৌরসভা থেকে বিপুল পরিমাণ ভোট পড়েছিল নৌকা প্রতীকে।

এবারের (দ্বাদশ সংসদ) নির্বাচনে ভোটের সেই চিত্র পাল্টে গেছে। শুরুর দিকে নৌকার জোয়ার দেখা গেলেও এখন ঈগলের সমর্থন দিন দিন বাড়ছে। পাশাপাশি নৌকা ও ঈগলের প্রচারণা ঘিরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে এবার নৌকার সঙ্গে ঈগলের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

গতকাল শনি ও আজ রোববার এ আসনের অন্তত ২৩টি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড ঘুরে সাধারণ ভোটার, জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ভোটের এই চিত্র পাওয়া গেছে। এ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। তিনি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে মাঠের রাজনীতি করছেন। সাইমুমের বাড়ি রামুর ফতেখাঁরকুলে।

ঈগল প্রতীকের প্রার্থী নতুন মুখ ও হাইকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ। তাঁর বাড়ি ঈদগাঁওয়ে। ভদ্র ব্যবহার ও গোছালো বক্তব্য দিয়ে ভোটারদের মনে জায়গা করে নিচ্ছেন মিজান সাঈদ। তিনি বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা।  

অন্যদিকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাইমুমের নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। এ কারণে জেলা আওয়ামী লীগ, কক্সবাজার পৌরসভা ও রামু, ঈদগাঁও ও কক্সবাজার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা সাইমুমের পক্ষে প্রচারণায় নামেননি। কমিটির বেশির ভাগ নেতা মিজান সাঈদের পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন। তাতে ভোটের মাঠের উত্তেজনাও তীব্র হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কক্সবাজার-৩ আসনের মতো সারা দেশে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের বহু নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে দলের নেতা-কর্মীরাও প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রের বাধাও নেই। সে হিসেবে কক্সবাজারেও বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও আমরা নৌকা প্রতীকের পক্ষে কক্সবাজার-১ ও ২ আসনে প্রচারণা চালাচ্ছি। ভোটারদের কেন্দ্রে আনার প্রতি জোর দিচ্ছি।’

এই দুই প্রার্থী ছাড়াও মাঠে তৎপর জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ তারেক (লাঙ্গল)। তিনি কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক। কক্সবাজার পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাহারছড়ায় তাঁর বাড়ি। এলাকায় তারেকের প্রভাবও রয়েছে। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির প্রার্থী ও দলের মহাসচিব আবদুল আউয়াল মামুনও (হাতঘড়ি) এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁর বাড়িও কক্সবাজার পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর বাহারছড়ায়। শহরের ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডে মামুনের ভোটব্যাংক রয়েছে। এ আসনে বাকি দুজন প্রার্থী হলেন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের প্রার্থী মোহাম্মদ ইব্রাহিম (টেলিভিশন) ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) শামীম আহসান (কুঁড়েঘর)। তবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মাঠে তেমন তৎপরতা নেই তাঁদের।

ঈগলের পক্ষে প্রচারণায় আওয়ামী লীগের নেতারা

রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ছোট ভাই সাইমুমের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। তবে নির্বাচনে তিনি এবার সাইমুমের পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন। কিন্তু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম মণ্ডল, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি রিয়াজুল আলমসহ দলের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে ঈগল প্রতীকের প্রচারণা চালাচ্ছেন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা প্রকট হচ্ছে।

শামসুল আলম মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, গত ১০ বছর সাইমুম এ আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন।

এই ১০ বছরে তিনি দল ও দলের নেতা-কর্মীদের জন্য কিছুই করেননি। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে তাঁর (সাইমুম) কোনো ধরনের যোগাযোগও ছিল না। বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। এখন ভোটের মাঠে খারাপ অবস্থা দেখে তিনি আওয়ামী লীগের নেতাদের খুঁজছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের ভোটার ও সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধ করে ঘরে ঘরে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সমর্থকেরাও সাইমুমের বিরুদ্ধে। এ অবস্থায় রামুতে নৌকাডুবি ঘটতে পারে।

পাশের ঈদগাঁও উপজেলায়ও একই অবস্থা। এখানে ঈদগাঁও  উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেব প্রকাশ্যে ঈগল প্রতীকের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। দলের অনেক নেতা-কর্মী ঈগলের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের কয়েক নেতা বলেন, সাইমুমের সঙ্গে গত ১০ বছর শহর আওয়ামী লীগের কোনো যোগাযোগ ছিল না। নির্বাচনের সময় এ দূরত্ব মেটানোর উদ্যোগও নেই।

এ প্রসঙ্গে শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নৌকা প্রতীকের পক্ষে আমরা পৃথকভাবে পথসভা করছি, ভোটারদের কেন্দ্রে আসার কথা বলছি। নৌকার প্রার্থী প্রচারণায় ব্যস্ত থাকেন, তাই একসঙ্গে প্রচারণা চালানো সম্ভব হচ্ছে না।’