জন্মের পর প্রথম বাবাকে পেলেও মাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে সাত মাসের ওজিহা

মায়ের কোলে শিশু ওজিহা
ছবি: সংগৃহীত

অনেকের কোলেই উঠছে সাত মাসের শিশু ওজিহা। কিন্তু কারও চেহারাই তার মায়ের সঙ্গে মেলাতে পারছে না। ওর কান্নাও থামছে না। আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন ওজিহার নানা আবুল হোসেন।

গত সোমবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আইয়ুবপুর ইউনিয়নের চর ছয়ানী দক্ষিণপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে খুন হন ওজিহার মা জেকি আক্তার (৩৬) এবং দুই ভাই মাহিন ইসলাম (১৬) ও মহিন ইসলাম (৭)। সাত মাস বয়সী ওজিহাকে অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় চর ছয়ানী গ্রামের কানাইনগর কবরস্থানে নিহতদের লাশ দাফন করা হয়। এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত জেকি আক্তারের ভাগনিজামাই জহিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জহিরুল জেকির বড় বোন শিল্পি আক্তারের মেয়ে আনিকা আক্তারের স্বামী। হত্যার কথা স্বীকার করে গতকাল বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন জহিরুল।

ওজিহার দুই ভাই মাহিন ইসলাম ও মহিন ইসলাম

ওজিহার বাবা শাহ আলম সৌদিপ্রবাসী। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার খবর পেয়ে গত মঙ্গলবার রাতে বাড়িতে ফিরেছেন তিনি। জেকির বাবা আবুল হোসেন বলেন, জন্মের পর এই প্রথম বাবাকে দেখছে ওজিহা। কিন্তু ও মাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। ওজিহা বর্তমানে চাচি খালেদা বেগমের কোলে আছে উল্লেখ করে আবুল হোসেন বলেন, ‘আমার মেয়ের শিশুসন্তান ওজিহার পৃথিবী উজাড় হয়ে গেছে। শিশুটা এতিম হয়ে গেল। সকাল থেকে মায়ের মুখকে খুঁজে বেড়াচ্ছে এই শিশু।’

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে শাহ আলম স্ত্রী–সন্তান নিয়ে মা–বাবার সঙ্গে থাকতেন। তিন–চার বছর আগে বাবার বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে নতুন পাকা ভবন নির্মাণ করেন তিনি। এর পর থেকে স্ত্রী ও সন্তানেরা আলাদা থাকা শুরু করে। ৯ মাস ছুটি শেষ করে ১ বছর আগে সৌদি আরবে ফিরে যান তিনি।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে জেকি আক্তারের বাসায় যান গৃহপরিচারিকা জেসমিন আক্তার। এ সময় জেকি আক্তারের বাড়ির প্রধান ফটকে তালা এবং ভেতরের দরজা বন্ধ থাকায় কলিং বেল চাপেন জেসমিন। অনেকক্ষণ অপেক্ষা ও ডাকাডাকি করেও ভেতর থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে স্বজন ও প্রতিবেশীদের ডেকে দরজা ভেঙে ঘরের মেঝেতে জেকি ও তাঁর বড় ছেলে মাহিনের লাশ দেখতে পান। পাশের শৌচাগারে পাওয়া যায় ছোট ছেলে মহিনের রক্তাক্ত লাশ। এ সময় সাত মাস বয়সী কন্যাসন্তান ওজিহা অক্ষত অবস্থায় ঘুমিয়ে ছিল।

আদালতে দেওয়া জহিরুলের জবানবন্দির বরাত দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিরাজুল ইসলাম বলেন, সাংসারিক বিষয় নিয়ে স্ত্রী আনিকার সঙ্গে জহিরুলের বিরোধ চলছিল। স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তিতে সহায়তা চাইতে সোমবার রাতে খালাশাশুড়ি জেকি আক্তারের বাসায় যান জহিরুল। আলোচনার সময় জেকি আক্তারের সঙ্গে জহিরুলের কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে বঁটি দিয়ে জেকির মাথার পেছনে ও ঘাড়ে কোপ দেন জহিরুল। এ সময় ঘুমিয়ে থাকা মাহিন জেগে উঠে চিৎকার দিয়ে জহিরুলকে থামাতে যায়। তখন জহিরুল তাকেও বঁটি দিয়ে কোপ দেন। মাহিন বাঁচার জন্য দৌড়ে নিজের কক্ষে ঢুকে দরজা বন্ধের চেষ্টা করে। জহিরুল তাকে টেনেহিঁচড়ে মায়ের পাশে ফেলে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। জহিরুলকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।