রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান ভবনের ধসে পড়া সাটারিং সরিয়ে নিচ্ছেন শ্রমিকেরা। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান ভবনের ধসে পড়া সাটারিং সরিয়ে নিচ্ছেন শ্রমিকেরা। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ধসে পড়া ভবনে বিমের কাজ সন্ধ্যায়, পরদিন ছাদ ঢালাই

বিম করার পর ১০-১৫ দিন সেখানে সময় দিতে হয়। এই সময়ের মধ্যে তা শুকিয়ে শক্ত হওয়ার পর কাজ করতে হয়। বিমে নিয়মিত পানি দিতে হয়।

ভবনের একতলার ওপরে তোলা পূর্বপাশের বিম এখনো ঝুলে আছে। এর পশ্চিম পাশে তৈরি করা ৫৬ ফুটের দুটি বিম নিচে পড়ে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। ওই দুটি বিমের নিচে কোনো কলামও ছিল না। গত সোমবার সন্ধ্যায় তিনটি বিমের ঢালাইয়ে কাজ শেষ হয়। পরদিন মঙ্গলবার সকাল থেকেই কাঁচা বিমের ওপরই ছাদ ঢালাই দেওয়া হয়। এ অবস্থায় ভবনটির ওই অংশ একেবারে ধসে পড়ে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত বিম করার পর ১০-১৫ দিন সেখানে সময় দিতে হয়। এই সময়ের মধ্যে তা শুকিয়ে শক্ত হওয়ার পর কাজ করতে হয়। বিমে নিয়মিত পানি দিতে হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ধসে যাওয়া ভবনে এসব কিছুই মানা হয়নি।

মঙ্গলবার দুপুরের দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের সামনে নির্মাণাধীন শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হলের মূল ভবনের সামনে পূর্ব পাশে ভবনের একটি অংশ ধসে পড়ে। এ ঘটনায় ৯ জন আহত হন বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দুই শ্রমিক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে ফায়ার সার্ভিস উদ্ধারকাজ শেষ করে। ওই রাতেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক জরুরি সভা ডেকে এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে। এ ছাড়া গতকাল বুধবার ভবনধস কেন ঘটল, তার বিবরণসহ সাইট প্রকৌশলী, প্রধান প্রকৌশলী ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পৃথকভাবে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

এ সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মো. সুলতান-উল-ইসলাম বিকেলে বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তবে তিনি প্রতিবেদনগুলো খুলে দেখবেন না। প্রতিবেদনগুলো তিনি তদন্ত কমিটির কাছে হস্তান্তর করবেন। তিনি চান, এ ঘটনায় একটি স্বাধীন তদন্ত হোক।

এদিকে, গতকাল নির্মাণাধীন ভবনে কাজ বন্ধ ছিল। তবে কিছু শ্রমিককে ভেঙে পড়া বিম ও ছাদের সাটারিং সরানোর কাজ করতে দেখা যায়।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুই শ্রমিক প্রথম আলোকে জানান, সোমবার সাটারিংয়ের মাধ্যমে বিম তৈরির কাজ শেষ হয়। পরদিন মঙ্গলবার সকাল থেকেই রড বিছিয়ে ছাদ ঢালাইয়ের কাজ হয়। তাঁরা এ ধরনের কাঁচা বিমের ওপর কাজ করেননি কখনো। তবে সাইট থেকে কাজটা এভাবেই করার নির্দেশনা ছিল।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক খোন্দকার শাহরিয়ার রহমান বলেন, ‘তদন্ত হচ্ছে। এ কারণে কিছুই বলা যাচ্ছে না। তবে বিম তৈরির পর একটা নির্দিষ্ট সময় দিতে হয়। এখানে যেটা হয়েছে, তা স্বভাবতই স্বাভাবিক হয়নি।’ একই কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, তাঁরা আজ বিকেলে একটি প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দেবেন।

ধসে পড়া ভবন নির্মাণের কাজ পেয়েছে আলোচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’। এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আগেও নানা অভিযোগ উঠেছে। রূপপুরের বালিশ কাণ্ড তার মধ্যে অন্যতম। প্রতিষ্ঠানটির নির্মাণ কার্যক্রম দেখাশোনা করেন হায়াত মাহমুদ। তাঁকে বিকেল থেকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

ভবন ধসে শ্রমিক হতাহত অপ্রত্যাশিত নয়

এদিকে ভবন ধসের ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংগঠনগুলো। গতকাল বিকেলে ক্ষোভ জানিয়ে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি শাকিল হোসেন, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি রায়হান আলী, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের সভাপতি মেহেদী হাসান, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক তারেক আশরাফ, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক বাবলু চাকমা, ছাত্র গণমঞ্চের সমন্বয়ক নাসিম সরকার।

বিবৃতিতে ছাত্রনেতারা বলেন, ধসে পড়া ভবনের বাকি কাঠামোর স্থায়িত্ব, রডসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রীর উপযুক্ততা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। অনিরাপদ কাঠামো ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ দুর্ঘটনা বয়ে আনবে। তাই নতুন করে কাজ শুরু করার আগে অবিলম্বে নিরপেক্ষ প্রকৌশল কর্তৃপক্ষ দ্বারা ভবনটির মান যাচাই করতে হবে। ভবনধস ও ধারাবাহিক ছাত্র-শ্রমিক হতাহতের ঘটনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশনের নামে মামলা এবং তাদের শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।