আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় নিতে হবে: মঈন খান

ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপির নেতারা। রোববার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জ সদরের বালুর মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। এ সরকারকে বিদায় নিতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। একসময় আওয়ামী লীগ বলত ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’। আর এখন তারা বলে, ‘আমার ভোট আমি দেব, দিনের ভোট রাতে দেব।’

সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে মঈন খান এসব কথা বলেন। তিনি সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন। ভৈরব-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে কিশোরগঞ্জ সদরের লতিবাবাদ চক্ষু হাসপাতালসংলগ্ন বালুর মাঠে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা দুপুর থেকে প্রখর রোদ উপেক্ষা করে রাত ৯টা পর্যন্ত মাঠে উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যা পৌনে ৬টা থেকে আনুষ্ঠানিক সভা শুরু হয়। সভা চলে রাত ৯টা পর্যন্ত।

আবদুল মঈন খান বলেন, ‘এখন কথা বলার সময় না, এখন কাজের সময়। আমাদের এ আন্দোলন চলবে। এ সরকার বিদায় না নেওয়া পর্যন্ত আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলবে। আমরা ঘরে ফিরে যাব না। বিএনপির নেতা-কর্মীদের ১ লাখ ১০ হাজার মামলা হয়েছে। ৫০ লাখ বিএনপি নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। সরকার বলে সংবিধানে নেই, সে জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে পারে না। সরকার যদি সংবিধান-সংবিধান করে, তাহলে মৌলিক অধিকার থেকে কেন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয় না। বাকশালি আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে যুক্তি-তর্ক দিয়ে লাভ নাই। এ সরকারকে জন–আন্দোলনের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিতে হবে।’

সাবেক মন্ত্রী আবদুল মঈন খান আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। ১৯৯৬ সালে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার না চাইলেও পরবর্তী সময়ে জনগণের দাবিতে সেটা মেনে নিয়েছে। কিন্তু তখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল। এখন বাংলাদেশের ১২ কোটি ভোটার ভোট দিতে চায়। সে সুযোগ জনগণকে করে দিতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটাতে হবে।

রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশ উপলক্ষে কিশোরগঞ্জ সদরের লতিবাবাদ চক্ষু হাসপাতাল সংলগ্ন বালুর মাঠ নেতা–কর্মীদের পদচারণায় মুখর। রোববার সন্ধ্যায়

সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন। আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ওয়ারেস আলী, লায়লা বেগম, সাবেক কোষাধ্যক্ষ রফিকুল জামান, কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন প্রমুখ।
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলামের সঞ্চালনায় রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম।

সমাবেশের বিশেষ অতিথি নজরুল ইসলাম খান বলেন, ২০১৪ সালে ১৫৩ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত। ২০১৮ সালে রাতের ভোটে নির্বাচিত এ সরকার। তাহলে এ সংসদ কি বৈধ? অবশ্যই এ সরকারের পতন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সাজাপ্রাপ্ত কোনো আসামিকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর নাকি আইন নেই। খালেদা জিয়ার যদি কোনো ক্ষতি হয়, তাহলে এ আগুনে সরকার জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যাবে।

সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ১/১১ এর সরকার আসার পর শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এটা তাদের আন্দোলনের ফসল। আওয়ামী লীগ লুডু খেলার মতো তিন ছক্কা পেয়ে পোক্কা হয়ে গেছে। এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আর খেলা হবে না।

বেলা সাড়ে ১১টায় ময়মনসিংহের ত্রিশাল থেকে বিএনপির রোডমার্চ কর্মসূচি শুরু হয়। উদ্বোধনী পর্বেও প্রধান অতিথি ছিলেন আবদুল মঈন খান। এরপর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল উপজেলার বগার বাজার থেকে কিশোরগঞ্জ অভিমুখে রোডমার্চ শুরু হয়। ১১৪ কিলোমিটার রোডমার্চটি ময়মনসিংহ মহাসড়কের চায়না মোড়, শম্ভুগঞ্জ হয়ে ঈশ্বরগঞ্জে পৌঁছায়। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার লতিবাবাদ চক্ষু হাসপাতালসংলগ্ন বালুর মাঠে এ রোডমার্চটি শেষ হয়।