মাদারীপুর সদর উপজেলার হাউসদী বাজারে একটি দোকানের সামনে টাঙিয়ে রাখা পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির পতাকা
মাদারীপুর সদর উপজেলার হাউসদী বাজারে একটি দোকানের সামনে টাঙিয়ে রাখা  পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির পতাকা

মাদারীপুরে হঠাৎ সক্রিয় পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি, আতঙ্ক

পাঁচ বছর আগে  সংগঠনটি এলাকায় পতাকা টাঙিয়ে ছিল। এরপর তাদের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।  শুক্রবার সংগঠনটি তৎপরতা শুরু করে।

অনেক দিন পর মাদারীপুরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে চরমপন্থী সংগঠন পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি। সদর উপজেলার হাউসদী বাজারের একটি দোকানে সংগঠনটির একটি লাল পতাকা দেখা গেছে। ওই এলাকার বিভিন্ন দেয়ালে প্রচারপত্র সাঁটিয়ে তাদের অস্তিত্বের কথা মানুষের কাছে জানান দিচ্ছে সংগঠনটি। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে আসার পর শুক্রবার বিকেলে সংগঠনটির লাল পতাকাটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। পুলিশ বলছে, প্রকাশ্যে পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির কোনো কার্যক্রম মাদারীপুরে নেই। নির্বাচন এলেই নিষিদ্ধ এ সংগঠনটি নানা অপতৎপরতা শুরু করে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার দুধখালী ইউনিয়নের হাউসদী বাজারে গতকাল শুক্রবার সকালে ‘মা টেলিকম’ নামের একটি দোকানের সামনে স্থানীয় লোকজন পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির লেখা এবং হাতুড়ি ও কাস্তে প্রতীক আঁকা লাল রঙের পাতাকা টাঙিয়ে রাখতে দেখা যায়। এ সময় বাজারের বেশ কয়েকটি স্থানে কম্পিউটারে টাইপ করা ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদের নির্বাচনী প্রহসন বর্জন করুন, বানচাল করুন’ শিরোনামের একটি প্রচারপত্র সাঁটানো দেখা যায়।

পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির প্রচারপত্রে লেখা হয়েছে, ‘৭ জানুয়ারি ফ্যাসিবাদী হাসিনা-মার্কা নির্বাচনে জনগণের ভোট দেওয়া না দেওয়া সমান কথা। এতে জনগণের মতামতের কোনো মূল্য নেই, স্বার্থও নেই। বরং তারা নতুন করে ক্ষমতায় এলে জনগণের ওপর আরও বর্ধিত রূপে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন জেঁকে বসবে। দ্রব্যমূল্যের চাপে জনজীবন হবে আরও দুর্বিষহ। বিদেশি শয়তানরা, বিশেষত ভারত এ দেশে তাদের থাবা আরও জোরালোভাবে বসিয়ে দেবে।’

প্রচারপত্রে আরও বলা হয়, ‘দক্ষিণাঞ্চলের মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও বরিশালকে হাসিনা-আওয়ামী লীগ তাদের পৈতৃক সম্পত্তি মনে করে। মাদারীপুরের একসময়ের কুখ্যাত খুনি জাসদ পান্ডা, বর্তমানে আওয়ামী সন্ত্রাসের গডফাদার শাজাহান খান, শিবচরের চৌধুরী পরিবার, বরিশালের সেরনিয়াবাত পরিবার ও গোপালগঞ্জের শেখ পরিবার—এই চার পরিবার মিলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে।’ এ ছাড়া প্রচারপত্রে কৃষক-শ্রমিক-দরিদ্র-মধ্যবিত্তের বিপ্লবী রাষ্ট্রক্ষমতা প্রতিষ্ঠার জন্য মাওবাদী গণযুদ্ধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাউসদী এলাকার স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘হাউসদী ছাড়াও কালিবাজার, শিরখাড়া, রাজারহাট এলাকার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির লোকজন রাতে লিফলেট লাগানোর কাজ করেছে।’ তিনি আরও বলেন, একসময় এ অঞ্চলে সর্বহারা পার্টির দৌরাত্ম্য থাকলেও ১০ বছরের বেশি সময় ধরে তারা অকার্যকর ভূমিকায় রয়েছে। তবে গত বৃহস্পতিবার রাতে দুধখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে হাতবোমা বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন তিনি।

হাউসদী এলাকার ব্যবসায়ী আহসান আজগর বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে আমাদের দুধখালী ইউনিয়ন পরিষদের সামনে কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ হয়। গভীর রাত হওয়ায় কেউ তেমন খোঁজ নেয়নি। কিন্তু সকালে সর্বহারা পার্টির কিছু কার্যক্রম চোখে পড়ায় অনেকে ধারণা করছে, ওই পার্টির সদস্যরাই রাতে হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। অনেক বছর ধরে এ এলাকায় সর্বহারা দলের সদস্যদের তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। হঠাৎ অনেক বছর পর আবার চোখে পড়ল। বিষয়টি আমাদের কাছে কিছুটা হলেও আতঙ্কের কারণ।’

রাজারহাট এলাকার বাসিন্দা রুবেল হোসেন বলেন, ‘সর্বহারা পার্টির লিফলেট দেখে আমরাও চিন্তায় আছি। এলাকায় সবাই আলোচনা-সমালোচনা করে যাচ্ছে। এত কাল সর্বহারা পার্টির কথা শুনে আসছি, এখন তাদের লেখা পড়লাম। মানুষের মনে আতঙ্কের পাশাপাশি কৌতূহলও দেখা গেছে।’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দেড় দশক আগে সদর উপজেলার দুধখালী, শিরখাড়া, বাহাদুরপুর, খোয়াজপুর—এই চারটি ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় সর্বহারা পার্টির কার্যক্রম ছিল। র‌্যাব ও পুলিশের একাধিক অভিযানে সর্বহারা পার্টির অনেক সদস্য বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। এ ছাড়া অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়। এতে তাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে তাদের কার্যক্রম এসব এলাকায় না থাকলেও সশস্ত্র সংগঠনটির কিছু সদস্য এখনো রয়েছে।

এ সম্পর্কে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি একটি নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন। একটা সময় এ অঞ্চলে এদের অস্তিত্ব চরম আকারে ছিল। তবে এখন আর তাদের বিচরণ নেই। এর আগেও ২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় এ এলাকায় তারা তাদের লিফলেট ও পতাকা টাঙিয়ে ছিল। তাদের লিফলেটে আগামী নির্বাচনকেই ইস্যু করা হয়েছে। এবারও তারা একই কাজ করার চেষ্টা করেছে। যারা এই কাজ করেছে, তারা প্রকৃতপক্ষে সর্বহারা পার্টির সদস্য কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এখানে রাজনৈতিক বিষয় বা তৃতীয় পক্ষও থাকতে পারে।