বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ শেষ কার্যদিবসে তাঁর দায়িত্বভার হস্তান্তর করেন। দায়িত্বভার হস্তান্তর শেষে তাকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বরিশাল নগরের সদর রোডে বৃহস্পতিবার সকালে
বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ শেষ কার্যদিবসে তাঁর দায়িত্বভার হস্তান্তর করেন। দায়িত্বভার হস্তান্তর শেষে তাকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বরিশাল নগরের সদর রোডে বৃহস্পতিবার সকালে

মেয়াদ শেষ হওয়ার চার দিন আগেই দায়িত্ব ছাড়লেন বরিশালের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ

বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকালে অব্যাহতি নিলেন সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। যদিও তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার আরও চার দিন বাকি আছে। এ অবস্থায় ১৪ নভেম্বর ভারপ্রাপ্ত মেয়রের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেবেন সাদিক আবদুল্লাহর চাচা ও নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ।

আজ সকাল সাড়ে ১০টায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের কার্যালয় নগর ভবন থেকে সাদিক আবদুল্লাহ স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় বরাবরে অব্যাহতি দেন। এ সময় বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দেওয়া হয়। নতুন মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার আগপর্যন্ত তিনি এ দায়িত্বে থাকবেন। মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ অব্যাহতি নেওয়ায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তাঁর সমর্থক নেতা-কর্মীরা সড়কের দুপাশে অবস্থান নিয়ে তাঁকে বিদায় জানান।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় নগর ভবনে যান সাদিক আবদুল্লাহ। শেষ কর্মদিবসে তিনি নগর ভবনে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি কর্মকর্তাদের নিয়ে অব্যাহতিপত্রে স্বাক্ষর করেন। বেলা ১১টায় তিনি নগর ভবন থেকে নেমে আসেন। এ সময় সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। পরে নগর ভবন চত্বরে মেয়র সাদিক করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন।

সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমি সবার সহযোগিতা পেয়েছি বলেই সিটি করপোরেশনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করেছি। আমি এখন জনতার কাতারে চলে এসেছি। আমি আমার সময়কালে যা করেছি, সব জনগণের স্বার্থে করেছি। ভবিষ্যতে যিনি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেবেন, আমি তাঁর সঙ্গে আছি। এই সিটি করপোরেশন ডিজিটাল থেকে স্মার্ট সিটি হবে, এটাই আমার নতুন মেয়রের কাছে প্রত্যাশা।’

নগর ভবন থেকে বের হয়ে মেয়র হেঁটে নগরের সদর রোডের লাইন রোডে আসেন। এ সময় তাঁর সমর্থক নেতা-কর্মীরা সড়কের দুপাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে বিদায় জানান।

নগর ভবন থেকে বের হয়ে তিনি হেঁটে নগরের সদর রোডের লাইন রোডে আসেন। সেখানে তিনি সংক্ষিপ্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর, মাহাবুব উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম), সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানসহ রাজনৈতিক ও সামাজিক–সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বলেন, সাদিক আবদুল্লাহ বৃহস্পতিবার সকালে তাঁদের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রী বরাবর অব্যাহতিপত্র জমা দিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী তাঁর অব্যাহতিপত্র তাঁরা মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে দেবেন। নতুন মেয়র দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত প্যানেল মেয়র-১ ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে সিটি করপোরেশনের রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন।

দলীয় নেতা-কর্মীরা বলেন, ২০১৮ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। এবার মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান সাদিক আবদুল্লাহর চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। মনোনয়ন নিয়ে শুরু থেকেই চাচা-ভাতিজার মধ্যে বিভেদ চলছিল। এই বিভেদ ঘোচাতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা নানামুখী তৎপরতা চালান।

গত ২৬ মে প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর থেকেই বরিশালের বাইরে অবস্থান করেন সাদিক আবদুল্লাহ। এমনকি ভোটের দিন ১২ জুনও তিনি বরিশালে ফেরেননি। ফলে চাচা-ভাতিজার মধ্যে বিভাজন ঘোচেনি। এখনো আলাদাভাবে দুই পক্ষ দলীয় নানা কর্মসূচি পালন করছে। এরপর আড়াই মাস পর গত ২২ জুন সড়কপথে ঢাকা থেকে বরিশালে ফেরেন সাদিক আবদুল্লাহ। তাঁর সমর্থক নেতা-কর্মীরা কয়েক শ মোটরসাইকেল নিয়ে শোভাযাত্রা করে তাঁকে স্বাগত জানান। এরপর তিনি রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনে তিনি বরিশাল-৫ আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।