সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের দুই দিনের কর্মবিরতির কারণে খালি পড়ে আছে টেকনাফ স্থলবন্দরের জেটিগুলো। তবে নোঙর করে রয়েছে পণ্যভর্তি কার্গো ট্রলার ও জাহাজ। আজ সোমবার সকালে
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের দুই দিনের কর্মবিরতির কারণে খালি পড়ে আছে টেকনাফ স্থলবন্দরের জেটিগুলো। তবে নোঙর করে রয়েছে পণ্যভর্তি কার্গো ট্রলার ও জাহাজ। আজ সোমবার সকালে

টেকনাফ স্থলবন্দরে কর্মবিরতি শুরু, মালামাল নিয়ে অপেক্ষায় ৩২টি ট্রলার–জাহাজ

কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের দুই দিনব্যাপী কর্মবিরতি আজ সোমবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে। এতে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা কাঠ, হিমায়িত মাছ, শুঁটকি, আচার, আদাসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী ৩২টি কার্গো ট্রলার ও জাহাজ বন্দরের পাশে নাফ নদীতে নোঙর করে মালামাল খালাসের অপেক্ষা করছে। দ্রুত মালামাল খালাস না করা হলে অনেক পণ্য পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের ডাকে সারা দেশের মতো টেকনাফ স্থলবন্দরেও আজ সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। বেলা ১১টা পর্যন্ত এই স্থলবন্দর থেকে কোনো পণ্য কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় সরবরাহ হয়নি। এ কারণে বন্দরে সৃষ্টি হয়েছে ট্রলার-জাহাজের জট। অন্য সময়ে সকালের এই কয়েক ঘণ্টায় ৪০টির বেশি ট্রাক আমদানি করা পণ্য নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়।

বন্দরে মালামাল ওঠানামার দায়িত্বে ছয় শতাধিক শ্রমিক রয়েছেন। দুই দিন কাজ বন্ধ করায় বিপাকে পড়েছেন শ্রমিকেরা। অনেকের ঘরে চুলা জ্বলবে না।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, কাল মঙ্গলবারও কর্মবিরতি চলবে। ততক্ষণ পর্যন্ত আমদানি পণ্য সরবরাহ না হলে পচে নষ্ট হবে। এতে কয়েক কোটি টাকা ক্ষতি হবে। তাঁরা আটকে পড়া পণ্য সারা দেশে সরবরাহের সুযোগ চান।

টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর প্রথম আলোকে বলেন, কর্মবিরতির কারণে ব্যবসায়ীদের মারাত্মক ক্ষতি হলেও করার কিছু নেই। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মৌলিক অধিকারপরিপন্থী কাস্টমস এজেন্টস লাইসেন্সিং বিধিমালা-২০২০ এবং পণ্য চালান শুল্কায়নে এইচএস কোড ও সিপিসি নির্ধারণে যেসব বিতর্কিত আইন করেছে, তা বাতিল করতে হবে। এ জন্য তাঁরা দুই দিনের কর্মবিরতি পালন করছেন।

আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে টেকনাফ স্থলবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, পুরো মাঠ ফাঁকা। সেখানে পণ্য পরিবহন বন্ধ আছে। শ্রমিকেরা মাঠের এক কোনায় বসে আছেন। বন্দরের সামনে টেকনাফ-কক্সবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশের অর্ধশতাধিক দোকানপাটের অধিকাংশ বন্ধ রয়েছে। বন্দরের প্রধান ফটকে একটি ব্যানার টাঙানো। সেখানে লেখা রয়েছে—সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের কর্মবিরতি চলছে।

বন্দরের জেটিগুলোও খালি পড়ে আছে। নাফ নদীতে নোঙর করে আছে পণ্যভর্তি ৩০টির বেশি কার্গো ট্রলার ও জাহাজ। এসব ট্রলার ও জাহাজে মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন ধরনের কাঠ, হিমায়িত মাছ, আদা, শুকনা সুপারি, শুঁটকি, নারকেল, আচারসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে এসেছে। স্থলবন্দরে বিশাল এলাকাজুড়ে বিভিন্ন ধরনের কাঠের স্তূপ পড়ে রয়েছে।

স্থলবন্দরের শ্রমিকনেতা আলী আজগর বলেন, বর্তমানে স্থলবন্দরের জেটিতে ৩২টি কার্গো ট্রলার ও জাহাজভর্তি মালামাল রয়েছে। এসব মালামাল ওঠানামার দায়িত্বে ছয় শতাধিক শ্রমিক রয়েছেন। দুই দিন কাজ বন্ধ করায় বিপাকে পড়েছেন শ্রমিকেরা। অনেকের ঘরে চুলা জ্বলবে না।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের লোকজন না আসায় বন্দরে অচল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান স্থলবন্দর পরিচালনাকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট টেকনাফ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন চৌধুরী।

স্থলবন্দরের কাস্টমস সুপার লুৎফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের কর্মবিরতি পালন করায় শুধু টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে দৈনিক চার কোটি টাকার করে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে সরকার।