কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় চোর সন্দেহে আবদুল হান্নান (৩২) নামের এক যুবককে উল্টো করে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনার ৫৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। নির্যাতনে জড়িত অভিযোগে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য জহিরুল ইসলামকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
উপজেলার ভাউকসার ইউনিয়নের চোত্তাপুকুরিয়া গ্রামে গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এরপর গতকাল রাতেই জহিরুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ। তিনি ভাউকসার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ রোববার তাঁকে কুমিল্লার আদালতে হাজির করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
চোত্তাপুকুরিয়া গ্রামের ছয় বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবদুল হান্নানের বিরুদ্ধে এলাকায় চুরিসহ নানা ধরনের অভিযোগ আছে। গত শুক্রবার রাতে চোত্তাপুকুরিয়া গ্রামের এক দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকার লোকজন আবদুল হান্নানকে সন্দেহ করেন। পরে বিষয়টি ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলামকে জানানো হয়। গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় জহিরুল হাজির হয়ে আবদুল হান্নানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এতে হান্নান চুরি করার বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে ইউপি সদস্য নিজেই হান্নানের পা দুটি বেঁধে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দেন।
এ ঘটনার ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, হান্নানের মাথা সড়কের পাশের একটি গর্ত বরাবর আছে। পা ওপরে। কঞ্চি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলাম। আশপাশে প্রচুর লোকজন ঘিরে আছেন। একপর্যায়ে হান্নান চিৎকার করেন। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেননি। ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজনের মধ্য থেকে কেউ এটি মুঠোফোনে ধারণ করেন।
নির্যাতনের এই ভিডিও বিকেলের দিকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সমালোচনা শুরু হলে পুলিশ রাত ৮টায় জহিরুল ইসলামকে আটক করে বরুড়া থানায় নিয়ে আসে। পরে ভুক্তভোগী আবদুল হান্নান বাদী হয়ে জহিরুলের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
আটকের আগে জহিরুল ইসলাম বলেন, আবদুল হান্নান একজন চোর। তাঁর অত্যাচারে অতিষ্ঠ গ্রামবাসী। তাই তাঁকে সাজা দেওয়া হয় সংশোধনের জন্য। কিন্তু এভাবে সাজা দিতে পারেন কি না—এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দেননি তিনি।
ভাউকসার ইউপির চেয়ারম্যান আহমেদ জামান মাসুদ বলেন, এভাবে একজন জনপ্রতিনিধি আইন হাতে তুলে নিতে পারেন না। চুরি করলে পুলিশে দিতেন। জহিরুল স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা। তিনি টানা দুবারের সদস্য এই ইউনিয়নে।
বরুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন বলেন, ভিডিও হাতে আসার পরপরই জহিরুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে রাতে। এভাবে আইন হাতে নিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন ঠিক হয়নি।