মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায় উদ্ধার হওয়া নবজাতককে দত্তক নিতে ১৭টি পরিবার আবেদন করেছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. ওয়াসিম আকরাম। এদিকে ওই নবজাতক ও তাকে নিজের সন্তান বলে দাবি করা তরুণী (১৯) একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. ওয়াসিম আকরাম প্রথম আলোকে বলেন, ওই নবজাতকের বিষয় নিয়ে আইনি জটিলতা রয়েছে। এখনই কোনো সিদ্ধান্তের কথা বলা যাচ্ছে না। তাঁরা সুস্থ হলে আবারও শিশুকল্যাণ বোর্ডের সভা হবে। সেখানে কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে। নবজাতকের চিকিৎসা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বুধবার ভোরে শ্রীপুর উপজেলার তখলপুর গ্রামের একটি মসজিদের পাশ থেকে উদ্ধারের পর ওই নবজাতককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে একই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন নবজাতককে সন্তান দাবি করা তরুণী। তবে তাঁদের ভিন্ন কক্ষে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও নার্সরা জানিয়েছেন, নবজাতক সুস্থ রয়েছে। গত বুধবার ভর্তির পর হাসপাতালের সেবিকা ও কর্মচারীরা পালা করে তাঁকে দেখভাল করছেন। নবজাতকের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক আনসার ও গ্রাম পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
ওই নবজাতকের মা দাবি করা তরুণী একই ভবনের অন্য একটি কক্ষে ভর্তি আছেন। ওই তরুণীর শরীরও দুর্বল। তবে নবজাতকের কাছে একসঙ্গে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না তাঁকে।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আশরাফুজ্জামান শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নবজাতকটির মা ওই তরুণী কি না, তা ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। ফলে আমরা দুজনকে একসঙ্গে থাকতে দিচ্ছি না। দুজনেরই চিকিৎসা চলছে।’
নবজাতকটিকে প্রথম দেখেন শ্রীপুর উপজেলার তখলপুর গ্রামের লিয়াকত বিশ্বাসের স্ত্রী রুবিয়া খাতুন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গত বুধবার ফজরের আজানের পর হাঁটাহাঁটি করতে বের হয়ে পশ্চিমপাড়া মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ঝোপের মধ্যে শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়ে তিনি এগিয়ে যান। সেখানে কাপড় দিয়ে প্যাঁচানো অবস্থায় ব্যাগের ভেতরে একটি নবজাতক দেখতে পান। পরে নবজাতকটি উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ওই দিন দুপুরে এক দম্পতি শ্রীপুর থানায় এসে নিজেদের ওই নবজাতকের মা-বাবা দাবি করেন। পরে ১৯ বছর বয়সী ওই তরুণী এসে নিজেকে শিশুটির মা বলে দাবি করেন। বুধবার দুপুরে পুলিশের কাছে এসে যে নারী শিশুটি তাঁর বলে দাবি করেছিলেন, এই তরুণী তাঁর ছোট বোন।
বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার উপজেলা শিশুকল্যাণ বোর্ডের বৈঠক হয়। বৈঠকে ওই তরুণী দাবি করেন, একই এলাকার একটি ছেলের সঙ্গে তাঁর প্রেম ছিল। বিয়ের আগেই তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। ওই তরুণীর বড় বোন নিঃসন্তান। এ কারণে তিনি সন্তানটি নিতে চেয়েছিলেন।
তাঁরা দাবি করেন, তিন দিন আগে বাড়িতে স্বাভাবিক প্রসবেই নবজাতকের জন্ম হয়। তবে ওই তরুণীর যেহেতু বিয়ে হয়নি, তাঁরা লোকলজ্জার ভয়ে নবজাতককে বুধবার ফজরের নামাজের সময় মসজিদের পাশে ঝোপের মধ্যে রেখে আসেন। তাঁদের পরিকল্পনা ছিল, নবজাতকের কান্নার শব্দে মসজিদের ইমাম এসে শিশুটিকে উদ্ধার করবেন। এরপর ইমাম যখন ঘোষণা দেবেন, সবার আগে তরুণীর বোন গিয়ে নবজাতকটি দত্তক নিয়ে নেবেন। তবে ইমামের আগে স্থানীয় এক গৃহবধূ নবজাতককে প্রথম দেখায় এসবের কিছুই হয়নি। যে কারণে তাঁরা পরে থানায় যোগাযোগ করেছেন।
ওই তরুণীর মা শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। মেয়ের এই অবস্থা হওয়ার পর থেকে ছেলেটির (তরুণীর প্রেমিক) খোঁজ নেই। ভয়ে তাঁদের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারিনি। এখন সামনে কী হবে জানি না।’
উপজেলা শিশুকল্যাণ বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে যুবকের সঙ্গে ওই তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল, তিনি এখন পলাতক। বৃহস্পতিবার সভায় ওই যুবককে খুঁজে বের করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।