ছাত্রলীগের দুই পক্ষের বিবাদ ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ফরিদপুর সার্কিট হাউস চত্বরে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের দুই শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মীকে কুপিয়ে জখমের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে কলেজটির শহর শাখার ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতির সামনে ‘সাধারণ ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকবৃন্দ’-এর ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন কলেজটির ভূগোল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সারেউন রহমান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান দ্বিতীয় বর্ষের নাজিবা খাতুন, অর্থনীতি চতুর্থ বর্ষের আবু হুরাইরা, সমাজকর্ম দ্বিতীয় বর্ষের ফারদিন রাফি, দর্শন তৃতীয় বর্ষের মেহেরাব হোসেন, ইংরেজি তৃতীয় বর্ষের মো. রানা হামিদ প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, তাঁরা কলেজে পড়াশোনা করতে এসেছেন, মরতে আসেননি। কিন্তু তাঁদের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। একের পর এক ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, কিন্তু তার কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। যাঁরা দুই শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখম করেছেন, তাঁরা সন্ত্রাসী। তাঁদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় আহত ছাত্র জামিম হোসেন অভিযোগ করেছেন। তবে তা মামলা হিসেবে নেয়নি পুলিশ।
আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলেজটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক অসীম কুমার সাহা মানববন্ধনে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দুই শিক্ষার্থী সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন। সেই সঙ্গে শিক্ষার পরিবেশ কলুষিত করছে যেসব সন্ত্রাসী, তাঁদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও করেন।
ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের বিবাদ ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ইতিহাস বিভাগের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জামিম হোসেন (২০) ও ইংরেজি তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানকে (২২) কুপিয়ে জখম করার ঘটনা ঘটেছে। ওই সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমান সার্কিট হাউসের তিনতলায় একটি কক্ষে অবস্থা করছিলেন। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আফিফ বিন ইসলাম অর্কর মধ্যে বিরোধের জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, ফাহিম আহমদের ১৫ থেকে ২০ জন সমর্থক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আফিফের সমর্থকদের ওপর হামলা চালান। সে সময় ওই দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে কুপিয়ে জখমের ঘটনা ঘটে।
আফিফ বিন ইসলামের অভিযোগ, ফাহিম তাঁর অনুসারীদের দিয়ে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ওই দুই শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখম করেছেন। অভিযোগের বিষয়ে ফাহিম আহমেদ বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকেলে সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণে তেমন কিছুই ঘটেনি। তিনি তখন ওপরে মন্ত্রী আব্দুর রহমানের সঙ্গে ছিলেন। কুপিয়ে জখম করার কোনো ঘটনা ঘটেনি। কোপাকুপি করে আমার সঙ্গে এ–জাতীয় কেউ নেই।’
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তামজিদুল রশিদ বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে ভুল–বোঝাবুঝি থেকে মারধরের ঘটনাটি ঘটেছে। যেহেতু সমস্যাটা নিজেদের, এ জন্য আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও মামলা কেনা নেওয়া হয়নি—এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘আমি থানার বাইরে। অভিযোগ কার কাছে দিয়ে গেছে, তা আমার জানা নেই। আমি থানায় গিয়ে খবর নেব। অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই মামলা হবে।’