বগুড়া-৬ (সদর) আসনে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান ওরফে রিপুর সম্পদ ৯ বছরের ব্যবধানে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এই সময়ে তাঁর অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ৩১ গুণ।
৯ বছর আগে রাগেবুল আহসানের পেশা ছিল কৃষি। তখন তাঁর হাতে নগদ টাকা বা ব্যাংকে কোনো সঞ্চয় ছিল না। নিজের সম্পদ বলতে ছিল ১০ ভরি স্বর্ণালংকার ও ২ লাখ টাকার আসবাব ও ইলেকট্রনিক পণ্য। ওই সময় রাগেবুল আহসানের স্ত্রী জোবাইদা আহসানের কোনো সম্পদ ছিল না।
এখন অবস্থা পাল্টেছে রাগেবুল আহসানের। তিনি ও তাঁর স্ত্রী এখন অনেক সম্পদের মালিক। একসময় তেমন আয়রোজগার না থাকা রাগেবুল আহসানের ব্যবসা, হাট ইজারা ও মৎস্য খামার থেকে বছরে আয় এখন আট লাখ টাকা। ৯ বছর আগে হাতে নগদ টাকা না থাকলেও এখন তাঁর কাছে নগদ ৫০ হাজার টাকা আছে। চারটি ব্যাংক হিসাব নম্বরে ৩১ লাখ ১৫ হাজার ৬২২ টাকা সঞ্চয় আছে।
২০১৪ সালের নির্বাচন এবং ২০২৩ সালের বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী রাগেবুল আহসানের সম্পদের এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী, ৯ বছর আগে রাগেবুল আহসানের স্ত্রী জোবাইদা আহসানের কোনো সম্পদ ছিল না। তবে এখন তাঁর ২০ ভরি স্বর্ণালংকার। বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী এই স্বর্ণালংকারের মূল্য ১৭ লাখের বেশি টাকা।
হলফনামায় দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ৯ বছর আগে রাগেবুলের নিজ নামে কোনো জমি ছিল না। এখন কৃষিজমি আছে ১৫ বিঘা। তবে এই জমি পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বলে হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেছেন।
হলফনামায় দেওয়া তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, রাগেবুল আহসানের ৫৩ শতক অকৃষিজমি আছে। এর বাইরে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ আয়তনের একটি মৎস্য খামারের মালিকও তিনি। তবে এটি পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বলে তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।
৯ বছর আগে রাগেবুল আহসানের কোনো বাসাবাড়ি ছিল না বলে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে। এখন পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৪ শতক জায়গার ওপর ৯ তলা নির্মাণাধীন বাড়ি আছে।
৯ বছর আগে রাগেবুল আহসানের ব্যাংকে কোনো দায়দেনা ছিল না। এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের আইসিবি সমমূলধন সহায়তা প্রকল্পে অধীন তাঁর নিজ নামে ৬৬ লাখ ৪০ হাজার এবং স্ত্রীর নামে ১৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা দায় থাকার তথ্য হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রাগেবুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার সম্পদের বেশির ভাগই পৈতৃক সূত্রে পাওয়া। ব্যবসার আয় দিয়ে যা কিছু সম্পদ করেছি, তা হলফনামায় উল্লেখ করেছি।’
রাগেবুল আহসান আরও বলেন, ‘আমার ও স্ত্রীর নামে ব্যাংকে কোনো দায়দেনা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি প্রকল্পে সমমূলধন সহায়তা নিয়েছি। এটি আসলে কোনো ঋণ নয়।’
রাগেবুল আহসান ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ওই সময়ে মনোনয়নের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনে হলফনামা দাখিল করেছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত দলীয় সিদ্ধান্তে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ায় তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন।
জাপার প্রার্থীর সম্পদ বেড়েছে চার গুণ
এবারের উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে প্রার্থী হয়েছেন জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হয়েছিলেন তিনি। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনেও জাপা থেকে প্রার্থী ছিলেন। দুবারই আওয়ামী লীগ এই আসনে কোনো প্রার্থী দেয়নি।
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৩ সালে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জাপার সাবেক এই সংসদ সদস্যের ৯ বছরে সম্পদ যেমন বেড়েছে, তেমনি কমেছে দায়দেনা।
হলফনামার সম্পদ বিবরণীর ঘরে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৪ সালে নুরুল ইসলামের কাছে নগদ ৪০ লাখ ৬৬ হাজার ৩৪৪ টাকা ছিল। ২০১৮ সালে তাঁর কাছে ছিল নগদ ৪৮ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ টাকা। ২০২৩ সালে তাঁর কাছে নগদ ১ কোটি ৬০ লাখ ১৫ হাজার ৮৬১ টাকা আছে। ৯ বছরে তাঁর নগদ অর্থের পরিমাণ চার গুণ বেড়েছে।
২০১৪ সালে নুরুল ইসলামের ৪ লাখ টাকার একটি গাড়ি ও একটি মোটরসাইকেল এবং ৫০ হাজার টাকার আসবাব ছিল। স্ত্রীর নামে ব্যাংকে ছিল আড়াই লাখ টাকা। পরিবারের সদস্যদের স্বর্ণালংকার ছিল ৫ ভরি। ৯ বছর আগে নিজের নামে কৃষিজমি ছিল ৩৫ শতক, ছিল ১৮ শতক জায়গার ওপর একটি পাকা বাড়ি। বেসরকারি এশিয়া ব্যাংকে দায় ছিল এক কোটি টাকা। এখন নুরুল চড়েন ২৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার গাড়িতে। ব্যাংকে দায় কমে এখন ৩৭ লাখ ৬৩ হাজার ৭৬১ টাকায় ঠেকেছে।
সম্পদে এগিয়ে জাসদ প্রার্থী
বগুড়া-৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে আয় বেশি জাসদের প্রার্থী ইমদাদুল হকের। হলফনামায় দেওয়া তথ্যনুযায়ী, জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হকের ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় ১ কোটি ৩৪ লাখ ৭ হাজার ৭৩৬ টাকা। ব্যাংকে আমানত আছে ১১ হাজার ৭৫৯ টাকার। স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ ২ লাখ টাকা ও ব্যাংকে জমা আছে ৬০ লাখ ২ হাজার ৫৪৩ টাকা। এ ছাড়া তাঁর কাছে ১০ ভরি স্বর্ণালংকার, ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার আসবাব এবং ব্যবসার ২ কোটি ৪৫ লাখ ৫১৫ টাকার পুঁজি আছে। নিজ নামে ৫ দশমিক ৬৬ বিঘা কৃষিজমি, সোয়া ৩০ শতক অকৃষিজমি ও ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার চারতলা ভবন আছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বগুড়া-৬ আসনে মোট ১৩ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। এর মধ্যে বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মনসুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মান্নান আকন্দ, আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম, বিএনপির সাবেক নেতা সরকার বাদল, বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ কবির আহম্মেদ ও রাকিব হাসানের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। এখন মাঠে আছেন আওয়ামী লীগের রাগেবুল আহসান, জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম, জাসদের ইমদাদুল হক, গণফ্রন্টের আফজাল হোসেন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. নজরুল ইসলাম, জাকের পার্টির মো. ফয়সাল বিন শফিক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মাছুদার রহমান।
দলীয় সিদ্ধান্তে বিএনপির সংসদ সদস্য গোলাম মো. সিরাজ পদত্যাগ করায় শূন্য হওয়া বগুড়া-৬ আসনে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণের জন্য তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।