১৪ বছর ধরে শরীরের ডান দিক অবশ। নিজে থেকে চলাফেরা করতে পারেন না আবদুল খালেক (৬০)। এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খালেককে ফরিদপুরের সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কার্যালয়ের সামনে ফেলে রেখে যান স্বজনেরা। প্রশাসনের তৎপরতায় আজ সোমবার সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে তাঁকে পাঠানো হয় বৃদ্ধনিবাসে।
আবদুল খালেক সালথা উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের ভাওয়াল গ্রামের বাসিন্দা। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। খালেকের দুই ছেলে আলমগীর মাতুব্বর (৪০) ও কলম মাতুব্বর (৩৫) বিয়ে করে নিজ নিজ শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করেন। খালেক দুবার বিয়ে করেছেন। দুই স্ত্রীই মারা গেছেন। দ্বিতীয় স্ত্রী মারা যাওয়ার পর প্যারালাইসিস হয়ে তাঁর শরীরের ডান দিক অবশ হয়ে যায়। এরপর বসতভিটা যা ছিল, তা বিক্রি করে চিকিৎসা করেন তিনি। এখন তাঁর সহায়–সম্বল বলে কিছু নেই।
এ অবস্থায় দুই বছর আগে তিনি আটঘর ইউনিয়নের বিভাগদী গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নেন। শ্বশুরবাড়ির লোকজনও আর তাঁর দায়িত্ব নিতে রাজি না হওয়ায় বৃহস্পতিবার তাঁকে ইউএনও কার্যালয়ের সামনে ফেলে রেখে যান।
আবদুল খালেক বলেন, ‘কেউ আমার কোনো খোঁজখবর রাখে না। দুই ছেলে বিয়ে করে রাজবাড়ী তাদের শ্বশুরবাড়িতে থাকে। আমার কোনো খোঁজ নেয় না। ভাইবোনেরা ভালো আছে। তারাও আমার দেখাশোনা করে না।’
এ ব্যাপারে বৃদ্ধের দুই ছেলের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। জোসনা বেগম নামের খালেকের শ্বশুরবাড়ির পক্ষের এক স্বজন বলেন, ‘আবদুল খালেকের ছেলেদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম। তারা কেউ ওনার দায়িত্ব নিতে চায় না। ওনার ভাইবোন সবার বাড়ি ও জমিজমা আছে। তারাও তাঁর খোঁজখবর নেয় না। আমাদের পক্ষেও আর তাঁকে টানা সম্ভব নয়।’
ইউএনও মো. আনিছুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁর কার্যালয়ের সামনে এক বৃদ্ধ লোককে তাঁর স্বজনেরা ফেলে রেখে যান। পরে তাঁর বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরে যোগাযোগ করে বৃদ্ধনিবাসে তাঁর থাকার ব্যবস্থা করেন।
সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত বৃদ্ধনিবাসটি ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা এলাকায় সোহরাওয়ার্দী সরোবরের পাশে অবস্থিত। শান্তিনিবাসের কারিগরি প্রশিক্ষক ডলি রানী সাহা বলেন, দুপুর ১২টার দিকে আবদুল খালেককে তাঁরা আনেন। তিনি নিজে হাঁটাচলা পর্যন্ত করতে পারেন না। বৃদ্ধ বয়সে স্বজনদের উপহাসের পাত্র হয়ে আসা এসব ব্যক্তির মুখের দিকে তাকালে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে যায়।