কুষ্টিয়া পৌরসভায় পুলিশের সামনে ঠিকাদারের কাছ থেকে হাটবাজার ইজারার দরপত্র ছিনিয়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। এ সময় ঠিকাদারকে মারধরও করেন তাঁরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে পৌর মেয়রের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ঠিকাদার।
এ ঘটনায় পৌর মেয়র বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ঠিকাদার ইব্রাহিম হোসেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আফিল উদ্দিন, শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকী, শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক হাসিব কোরেশী ও সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফেরদৌসের নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ ক্যাডার এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাই শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমানের অনুসারী। আর মানব চাকী শহর আওয়ামী লীগের সদস্য গৌরব চাকীর ছোট ভাই।
পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের হাটবাজার ইজারা দেওয়ার জন্য গত ২৫ জানুয়ারি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ১০টির মধ্যে ৭টি বাজারের ইজারা নেওয়ার জন্য দরপত্র কেনেন ইব্রাহিম হোসেন ও তাঁর কয়েকজন সহযোগী। আজ দুপুর ১২টার দিকে ইব্রাহিম হোসেন দরপত্র সঙ্গে নিয়ে একাই জমা দিতে যান মেয়রের কার্যালয়ে। যাওয়ার পরই ইব্রাহিমের কাছে দরপত্র দেখতে চান স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মানব চাকী, আওয়ামী লীগ নেতা আফিল উদ্দিন, ছাত্রলীগ নেতা হাসিব ও ফেরদৌস। ইব্রাহিম অপারগতা প্রকাশ করলে মারধর করে তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলা হয়। এ সময় পাশেই কয়েকজন পুলিশ সদস্য থাকলেও তাঁরা নিশ্চুপ ছিলেন।
ঠিকাদার ইব্রাহিম হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা সরকারি দরের অনেক বেশি টাকা দিয়ে বাজার নেওয়ার জন্য দরপত্র জমা দিতে যাই। এ সময় শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমানের অনুসারী মানব চাকী, আফিল উদ্দিন, হাসিব, ফেরদৌসসহ ২০ থেকে ২৫ জন ঘিরে ধরে হেনস্তা করে দরপত্র ছিনিয়ে নেন এবং ছিঁড়ে ফেলেন। আমি প্রতিবাদ করলে তাঁরা আমাকে হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমি মেয়রের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। ফুটেজ দেখলেই সত্যতা পাওয়া যাবে।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যক্তি বলেন, কোন ঠিকাদার কোন হাটের দরপত্র ফেলছেন, সেটা ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দেখছিলেন। একজন ঠিকাদার দরপত্র জমা দিতে গেলে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, কুষ্টিয়া পৌর এলাকার সবচেয়ে বড় ম আ রহিম সুপারমার্কেটসংলগ্ন মাছ ও তরকারি বাজারের ইজারার সরকারি দর ছিল ১৭ লাখ ৪১ হাজার টাকা। এ বাজারের জন্য একটি মাত্র শিডিউল জমা পড়েছে। সেটি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আফিল উদ্দিনের। তিনি সরকারি দরে দরপত্র জমা দিয়েছেন। অথচ ইব্রাহিম হোসেন বাজারটির দর দিয়েছিলেন ৩৮ লাখ টাকা, যা দ্বিগুণের বেশি।
ইব্রাহিমের ঠিকাদারি কাজের এক সহযোগী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের একটি সিন্ডিকেট নামমাত্র মূল্যে বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিতে কোনো ঠিকাদারকে দরপত্র ফেলতে দেয়নি। সরকারি দরের বাইরে দুই থেকে তিন গুণ বেশি দর দিয়ে আমরা দরপত্র রেডি করি। এতে সরকার অনেক বেশি রাজস্ব পেত। কয়েক কোটি টাকার এ বাজার নিয়ন্ত্রণে নিতে মানব চাকী ও আফিল উদ্দিনের ক্যাডাররা পাহারা বসান। ইজারা বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি।’
অভিযোগের বিষয়ে শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকী বলেন, ‘পশু জবাইয়ের ইজারা গত বছর আমি ও আমার ইউনিটের ছেলেরা ডেকেছিলাম। এবারও পশু জবাইয়ের ইজারার দরপত্র জমা দিতে গিয়েছিলাম। সে সময় হঠাৎ হইচই শুনতে পাই। আমি সাইডে চলে যাই। এ ঘটনার সঙ্গে আমার বিন্দুমাত্র কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যারা অভিযোগ করছে, তারা ঠিক বলছে না। আফিল উদ্দিনের বিষয়টি আমি বলতে পারব না।’
৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আফিল উদ্দিন বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি পৌরসভায় একটি কাজে ছিলাম। ওই ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো যোগসূত্র নেই। আমি থাকাকালে একটি গ্যাঞ্জাম হয়েছে বলে শুনেছি, তবে যারা করেছে, তারা কাজটি ভুল করেছে। আমাকে সবাই ভালোবাসে। আমি এসব কাজে থাকি না।’
ভুক্তভোগী ঠিকাদারের অভিযোগ পেয়েছেন জানিয়ে পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহিন উদ্দিন বলেন, ‘একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সিসিটিভির ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখা গেছে দরপত্র ফেলা নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। সেখানে অনেকের উপস্থিতি ছিল।’ এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি, লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’