ঢাকায় মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার কুষ্টিয়া-৪ আসনের (কুমারখালী-খোকসা) সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রউফকে কুষ্টিয়া কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ বুধবার সন্ধ্যায় তাঁকে ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ায় আদালতে নেওয়া হয়। আদালতের জিআরও শাখায় কিছুক্ষণ বসিয়ে রাখার পর তাঁকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
আবদুর রউফকে কুষ্টিয়া মডেল থানায় গত রোববার হওয়া একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কুষ্টিয়া-৪ আসন থেকে জয় পান আওয়ামী লীগের নেতা আবদুর রউফ।
র্যাবের একটি সূত্র জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার রাতে র্যাব-১২ ও র্যাব-৪–এর যৌথ অভিযানে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রউফকে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাত একটার পর তাঁকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়। আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে একটি কালো মাইক্রোবাসে খাইরুজ্জামানসহ পুলিশের একটি দল আবদুর রউফকে নিয়ে কুষ্টিয়া আদালতে আসেন। গাড়ি থেকে নামিয়ে তাঁকে আদালতের সদর জিআরও শাখায় নেওয়া হয়। এ সময় তাঁর হাতে হাতকড়া ছিল না। পাঞ্জাবি পরিহিত আবদুর রউফ হেঁটে কক্ষে যান। এ সময় তিনি হাত বাড়িয়ে সাংবাদিকদের ছবি তুলতে বারণ করেন। কক্ষে ঢোকার পর তিনি চেয়ারে বসে থাকেন। এ সময় পুলিশের কর্মকর্তারা অফিশিয়াল কাজ করতে থাকেন। রউফের কর্মী-সমর্থকেরা ও আইনজীবী ছুটে আসেন সেখানে। তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। পানিসহ কিছু খাবার এগিয়ে দেন। কিন্তু তিনি শুধু পানির বোতল হাতে নেন। ২০ মিনিট বসার পর তাঁকে পুনরায় একই গাড়িতে তোলা হয়। গাড়িতে ওঠার সময়ও তিনি সাংবাদিকদের ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণে বারণ করেন। এরপর তাঁকে নিয়ে কারাগারের দিকে রওনা দেয় পুলিশ।
এ সময় জানতে চাইলে আদালত পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসামিকে রিসিভ করা হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট জানিয়েছেন, কাল (বুধবার) মামলার শুনানি। আপাতত তাঁকে কারাগারে রাখা হচ্ছে।’
কুষ্টিয়া মডেল থানার পুলিশ সূত্র জানায়, গত রোববার রাত পৌনে ১১টায় কুষ্টিয়া শহরের মিললাইন এলাকার লালন শাহ সড়কের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে সুজন হোসেন বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ৫ বছর আগে বিএনপির কর্মী সুজন মালিথাকে হত্যার অভিযোগে হওয়া ওই মামলায় ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রউফ এই মামলার এজাহারনামীয় ৮ নম্বর আসামি। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ১০-১২ জনকে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে আসামিরা সবাই মিলে সুজন মালিথাকে নিজ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে সুজন মালিথাকে কুষ্টিয়া শহরের মোল্লাতেঘরিয়া এলাকায় গুলি করে হত্যা করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন কুষ্টিয়ার তৎকালীন পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম তানভীর আরাফাত, কুষ্টিয়া মডেল থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন, একই থানার সাবেক পরিদর্শক এ কে এম মিজানুর রহমান, এসআই সাহেব আলী, এসআই মোস্তাফিজুর রহমান, কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান, দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বুলবুল আহমেদ টোকন চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা কুষ্টিয়া নাগরিক পরিষদের সভাপতি সাইফুদ্দৌলা তরুণ, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম, কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মহিদুল ইসলাম, ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ আরিফুর হোসেন, কুষ্টিয়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কৌশিক আহমেদ এবং জেলা শ্রমিক লীগের সহসভাপতি সোহাগ আলী।