চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে মিট দা প্রেস অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ (এবি) পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। আজ দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে মিট দা প্রেস অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ (এবি) পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।  আজ দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে

‘সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ড বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়’

সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বলে মন্তব্য করেছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রামে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘সচিবালয়ের আগুনে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও নাহিদ ইসলামের কার্যালয় পুড়ে গেছে। আমি সরকারকে গুরুত্বসহকারে তদন্ত করার আহ্বান জানাই।’

আসাদুজ্জামান ফুয়াদ আরও বলেন, ‘এর আগে সজীব ওয়াজেদ জয় (সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র) বারবার বলেছেন, ‘কোনো প্রমাণ পাবেন না আমাদের ব্যাপারে।’ তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা ছিলেন। হাজার কোটি টাকা লুটপাটের নায়ক ছিলেন। তাঁর ডিপার্টমেন্ট (বিভাগ) পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় কোনো স্যাবোটাজ (নাশকতা) হয়েছে কি না, সরকারকে অবশ্যই তদন্ত করতে হবে।’

চট্টগ্রাম নগরের জামালখানে অবস্থিত প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে ‘পলিসি–বেজড পলিটিকস ও চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য পাঁচ প্রস্তাব’ শীর্ষক এ আয়োজন করা হয়। এতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সংস্কার বিষয়ে আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, জুন, জুলাই ও আগস্টের পরিবর্তনের ধরনটা বুঝতে হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক কর্মীরা খুনের শিকার হয়েছেন। গুম হয়েছেন। কিন্তু দিন শেষে সারা দেশের মানুষ রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে রাস্তায় নেমে আসেনি। এটাই সত্য। এটি মেনে নিতে হবে।’ ছাত্রদের নেতৃত্বেই জনগণ রাস্তায় নেমেছে উল্লেখ করে এবি পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব বলেন, শেষ গোলটা ছাত্ররাই দিয়েছেন। তাঁদের নেতৃত্বে আন্দোলনের পর শেখ হাসিনা পালিয়েছেন। ছাত্রসমাজ কী চেয়েছে? দেয়ালে দেয়ালে যে গ্রাফিতি হয়েছে, সেখানে কোথাও অবিলম্বে নির্বাচন দেওয়ার কথা নেই। তারা নতুন বন্দোবস্তের কথা বলেছে। ফ্যাসিবাদী বন্দোবস্ত বিলোপ চেয়েছে। এই আকাঙ্ক্ষা ধারণ করতে হবে।

সংস্কার ও নির্বাচন দ্বিমুখী কোনো বিষয় নয় বলে উল্লেখ আসাদুজ্জামান বলেন, সংস্কার ও নির্বাচন একই প্যাকেজের অংশ। সংস্কারপ্রক্রিয়ার মধ্যে নির্বাচন অন্তর্ভুক্ত হয়ে আছে। ইতিমধ্যে নির্বাচন সংস্কারবিষয়ক কমিশন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়ে গেছে। কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু করবে। এটি করতে করতে ২০২৬ সালের মার্চ পর্যন্ত যেতে পারে। তারপর নির্বাচন হবে। প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐকমত্য তৈরিতে একটি কমিশন করার কথাও বলেছেন। এ কমিশন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলবে। কতটুকু সংস্কার হবে, সে বিষয়ে আলাপ করবে। এরপর তারা নির্বাচনের দিকে চলে যাবে। ফলে যে আকাঙ্ক্ষার জায়গা থেকে পরিবর্তন হয়েছে, সেদিকেই যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে এবি পার্টির পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের উন্নয়নে পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো নগর সরকার ও স্বতন্ত্র সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরকারি কোষাগারে জমা হওয়া মুনাফার ন্যূনতম ৩০ শতাংশ চট্টগ্রামের উন্নয়নে ব্যয় করা, কর্ণফুলী নদী ও খালগুলোর যুগোপযোগী সংস্কার এবং নগর সম্প্রসারণ প্রকল্প নেওয়া, চট্টগ্রাম নগরকে ‘ট্রেড কানেকটিভিটি হাব’ হিসেবে প্রস্তুত করা ও পরিবেশ বিপর্যয় রোধে পাহাড় পুনরুদ্ধার করা।

পরে চট্টগ্রামের উন্নয়ন নিয়ে আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, এখানে ১১ হাজার কোটি টাকা খরচ করে একটি টানেল তৈরি করা হয়েছে। প্রতিদিন রক্ষণাবেক্ষণে ৩৭ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। আর টোল থেকে উঠে আসছে মাত্র ১০ লাখ টাকা। রাষ্ট্রের টাকায় একটি প্রকল্প হয়েছে, কিন্তু এটির মাধ্যমে কত টাকা আয় হবে, তার কোনো বিশ্লেষণ হয়নি। চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ এখানে কোনো এক্সিট পয়েন্ট নেই। রাষ্ট্র লুটপাট মডেলের ওপর ভিত্তি করে উন্নয়ন করেছে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির চট্টগ্রাম নগরের আহ্বায়ক গোলাম ফারুক, যুগ্ম আহ্বায়ক ছিদ্দিকুর রহমান, সদস্যসচিব সৈয়দ আবুল কাশেম প্রমুখ।