‘আমরা মুক্তি পেয়েছি, দোয়া কর যেন তাড়াতাড়ি তোমাদের সঙ্গে দেখা হয়। দেশে আসতে পারি।’ ফোনে এমন কথা শোনার পর থেকে খুশিতে আর ঘুম হয়নি শামসুদ্দিন শিমুলের স্ত্রী ফারজানা সুলতানা ও তাঁর পরিবারের লোকজনের। আজ রোববার ভোর সাড়ে তিনটার দিকে শামসুদ্দিনের ফোনকলটি আসে। এখন সবার অপেক্ষা শামসুদ্দিন কখন পৌঁছাবেন।
এর আগে গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ জিম্মি করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। এরপর তারা জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যায়। ওই জাহাজের ২৩ জনের মধ্যে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়ন সেন্টার এলাকার বাসিন্দা মো. শামসুদ্দিন শিমুল অয়েলার হিসেবে কর্মরত আছেন।
শামসুদ্দিনের পারিবারিক সূত্র জানায়, জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর মা শাকেরা বেগম, স্ত্রী ফারজানা সুলতানা, ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে রামিসা তাসনিম এবং দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া আয়েশা তাসনিমের দিনগুলো যেন বিভীষিকাময় কেটেছে। এর মধ্যে পবিত্র ঈদুল ফিতর চলে এলেও ঈদের খুশি ছিল না পরিবারটিতে। সর্বশেষ আজ ভোরে শামসুদ্দিনের একটি ফোনকলে বদলে যায় পুরো পরিবারের চিত্র। নিরাশা কাটিয়ে পরিবারে ছড়িয়ে পড়েছে খুশির আমেজ।
শামসুদ্দিনের স্ত্রী ফারজানা সুলতানা বলেন, ‘গত এক মাস থেকে আমাদের পরিবারের ওপর দিয়ে মূলত ঝড় বয়ে গেছে। চরম অনিশ্চয়তায় দিন কেটেছিল আমাদের। পরিবারের লোকটা ফিরে আসবে জেনে ঈদের আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে গেল।’
শামসুদ্দিনের মা শাকেরা বেগম বলেন, ‘ছেলের মুক্তির খবর ছড়িয়ে পড়লে সকাল থেকে আত্মীয়স্বজন আমাদের বাসায় দেখতে আসছেন। ছেলের মুক্তিতে সবাই খুশি।’
শামসুদ্দিনের চাচাতো ভাই নুরুল আকতার বলেন, ‘গত এক মাস আমরা চরম হতাশায় ছিলাম। এখন পুরো এলাকায় আনন্দ ছড়িয়ে পড়ছে।’
পরিবারের সদস্যরা জানান, গত তিন বছর আগে জাহাজে চাকরি নেন শামসুদ্দিন। বছরে ছয় মাস সমুদ্রে থাকলেও অবশিষ্ট ছয় মাস বেকার সময় কাটে। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে জাহাজে ওঠেন শামসুদ্দিন। জুনের দিকে ঘরে ফেরার কথা। কিন্তু তার আগে বিপদে পড়েন তাঁরা। ঘটনার দিন বিকেল চারটার সময় প্রথম অপহরণের খবর পরিবারকে জানান শামসুদ্দিন। তখন তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘জাহাজে জলদস্যু উঠতে চেষ্টা করছে, দোয়া করিও। আমাদের জন্য দুশ্চিন্তা করিও না।’ এরপর সর্বশেষ সাড়ে ছয়টার সময় ‘জলদস্যুরা মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে, আর কথা হবে না’ বলতে বলতে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
শামসুদ্দিনের বাবা আইয়ুব আলীও বেশ কিছু দিন জাহাজে চাকরি করেন এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। ১০ বছর আগে তিনি মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি গ্রামে ফিরে এসেছিলেন।