সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে এক স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্ত এবং এর প্রতিবাদ করায় তার বাবার ওপর হামলার ঘটনা হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগের এক নেতা জামিন পেয়েছেন। ওই আসামিকে এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ফুলের মালা পরিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় থানা আওয়ামী লীগের নেতাদের উপস্থিতিতে তাঁকে এই সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তাঁকে ফুলের মালা পরিয়ে সংবর্ধনা দেওেয়ার বেশ কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছড়িয়ে পড়েছে।
ওই ছবিগুলোতে এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রাশেদুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন দলীয় নেতা-কর্মীকে দেখা যায়। সেই সঙ্গে এই মামলার পাঁচ নম্বর পলাতক আসামি শাহজাদপুর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের আবদুস সালামের ছেলে মো. মন্টুকেও দেখা যায়। এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বাদীপক্ষ হুমকি পাওয়ার অভিযোগ করে নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়েছে।
জামিনে মুক্ত ওই আসামির নাম রাশেদ উদ্দিন ভূঁইয়া (৪২)। তিনি এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক। তিনি ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার মামলার এজাহারভুক্ত ৪ নম্বর আসামি। বুধবার বিকেলে সিরাজগঞ্জ আমলি আদালতের (এনায়েতপুর-চৌহালী) বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নাহিদ রহমান শরীফ শুনানি শেষে গ্রেপ্তার চার আসামির মধ্যে রাশেদ উদ্দিন ভূঁইয়ার জামিন মঞ্জুর করেন।
মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী নিখিল কুমার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বুধবার দুপুরে থানা থেকে মামলাটি আদালতে পাঠানো হলে বিকেলে আমরা সেখানে জামিন আবেদন করি। আদালতের বিচারক তাঁর জামিন আবেদন মঞ্জুর করে বাকি তিনজনকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।’
মামলার বাদী ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা অভিযোগ করে বলেন, ‘মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আত্মীয়–পরিজনসহ আমরা সবাই এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে একজন জামিনে মুক্তি পেয়ে এলাকায় আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। বিষয়টি মীমাংসা করে নিতে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রাশেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘থানায় উত্ত্যক্ত করার বিষয়ে মামলা হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। এ বিষয়ে আদালতে বিচার হবে। তবে গ্রেপ্তার চার আসামির মধ্যে থানা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রাশেদ উদ্দিন ভূঁইয়ার বিষয়ে আমরা যত দূর জানি, কোনো অবস্থাতেই এই ঘটনার সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা নেই। যে কারণে তাঁকে জামিনে মুক্তি দেওয়ায় দলের নেতা হিসেবে আমরা তাঁকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেছি। এ ছাড়া এখানে অন্য কিছু ভাবার সুযোগ নেই। আমরাও এই মামলার সুষ্ঠু বিচার কামনা করছি।’
মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে বাবা প্রতিবাদ করেন। ওই সময় বখাটে আজিজুলসহ আরও কয়েকজন মিলে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁর ওপর হামলা করে বেধড়ক মারধর করেন।
ভুক্তভোগীর ছাত্রীর পরিবার ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের চৌহালীর নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে আজিজুল ওরফে হৃদয় (২০) নামের এক বখাটে উত্ত্যক্ত করতেন। আজিজুল আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদ উদ্দিন ভূঁইয়ার স্বজন। মেয়েটির বাবা ঘটনাটি জানতে পেরে আজিজুলকে বুঝিয়ে তাঁর মেয়েকে উত্ত্যক্ত করতে নিষেধ করেন। এতে আজিজুল ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। গত মঙ্গলবার বিকেলে মেয়েটি বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে চৌহালীর কেজির মোড় এলাকায় আজিজুল আবারও তাকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। একপর্যায়ে আজিজুল মেয়েটিকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন এবং তার পথরোধ করে আটকে রাখেন।
মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে বাবা প্রতিবাদ করেন। ওই সময় আজিজুলসহ আরও কয়েকজন মিলে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁর ওপর হামলা করে বেধড়ক মারধর করেন। আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদ উদ্দিন ভূঁইয়াও মারধরে অংশ নেন। খবর পেয়ে পুলিশ ওই মেয়ের বাবাকে উদ্ধার করে। পরে রাশেদ উদ্দিন ও তাঁর লোকজন ঘটনাটি আপস-মীমাংসার জন্য ওই ছাত্রীর পরিবারকে হুমকি দেন।
পরে ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে রাশেদ উদ্দিন ভূঁইয়াসহ সাতজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। আজিজুলকে এই মামলার প্রধান আসামি করা হয়। পুলিশ আজিজুলসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে বুধবার দুপুরে আদালতে পাঠিয়ে দেয়। আদালত গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্য থেকে আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদ উদ্দিন ভূঁইয়াকে বিকেলে জামিন দেন। এ মামলার তিন আসামি পলাতক।