পাবনার ঈশ্বরদীতে ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতা একে-অপরের বিরুদ্ধে হামলা ও গুলির পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ও আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা এ অভিযোগ করেন।
ওই দুই নেতা হলেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ঈশ্বরদী উপজেলা শাখার সদস্যসচিব মেহেদী হাসান। এদের মধ্যে বৃহস্পতিবার রফিকুল ইসলাম নিজ বাড়িতে ও শুক্রবার মেহেদী হাসান ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে রফিকুল ইসলাম জানান, শেখ হাসিনার ট্রেনবহরে হামলার একটি মামলায় বিএনপির কারাবন্দী ৩০ নেতা-কর্মী জামিন পেয়েছেন। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে ঈশ্বরদী কলেজ ছাত্রদল আনন্দমিছিল করার উদ্যোগ নেয়। এ উপলক্ষে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা কলেজ চত্বরে জমায়েত হতে থাকেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মেহেদী হাসানের নির্দেশে একদল যুবক আনন্দমিছিলের জন্য জড়ো হওয়া ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালান। হামলায় কলেজ ছাত্রদলের প্রস্তাবিত কমিটির আহ্বায়ক খালেদ বিন পার্থিব আহত হন।
রফিকুল ইসলামের দাবি, হামলাকারীরা শুধু হামলা করেই ক্ষান্ত হননি, তাঁরা তাঁকে (রফিকুল) হত্যার জন্য তাঁর বাসভবনের সামনে এসে এলোপাতাড়ি গুলি করেছেন। পরে তিনি আত্মরক্ষায় পালিয়ে যান। এ ঘটনায় তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মেহেদী হাসানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে মেহেদী হাসান বলেন, তিনি কোনো হামলা ও গুলির ঘটনা ঘটাননি। ছাত্রদলের নেতা রফিকুল ইসলাম নিজের অপরাধ ঢাকতে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন। ঘটনার দিন ঈশ্বরদী সরকারি কলেজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছাত্ররা মাদকমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে একটি সমাবেশের আয়োজন করেন। এ সময় ছাত্রদলের নেতা রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে সাধারণ ছাত্রদের লক্ষ্য করে কয়েকটি গুলি করা হয়। এতে ছাত্ররা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।
মেহেদী হাসানের দাবি, ছাত্রদের ওপর গুলির ঘটনায় প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলে জানাজানি হলে রফিকুল ইসলাম রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সাংবাদিকদের বাড়িতে ডেকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তিনি (মেহেদী হাসান) এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। একই সঙ্গে ছাত্রদলের নেতা রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন।
অন্যদিকে স্থানীয় লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির নেতা-কর্মীরা মাঠে আসেন। তাঁরা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য নিজের শক্তি প্রদর্শন শুরু করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই বৃহস্পতিবার দুই পক্ষ ঈশ্বরদী সরকারি কলেজে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করে। এ নিয়েই দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েকটি গুলির শব্দ শোনা যায়। পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও গুলির ঘটনায় পুরো কলেজে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশি প্রহরায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষে বিকেলে বাড়ি ফেরেন।
জানতে চাইলে ঈশ্বরদী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কলেজে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গুলির খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তবে এ ঘটনায় কোনো পক্ষই থানায় কোনো অভিযোগ দেয়নি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।