রংপুরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি মামলায় ‘ইচ্ছেমতো’ আসামি করার অভিযোগ ওঠার পর মহানগর বিএনপির দুই নেতা পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করে পরস্পরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছেন। এই দুই নেতা হলেন রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান ও মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি কাওসার জামান।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি মামলায় ‘ইচ্ছেমতো’ আসামি করার অভিযোগ ওঠে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে। অভিযোগের বিষয়ে গত সোমবার সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। সামসুজ্জামান দাবি করেন, মহানগর বিএনপি ও তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য একটি গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করছে। মহানগর বিএনপির সদস্য কাওসার জামান এই ষড়যন্ত্রে জড়িত।
সামসুজ্জামানের বক্তব্যের প্রতিবাদে আজ বুধবার দুপুরে রংপুরে একটি কমিউনিটি সেন্টারে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি কাওসার জামান। তিনি বলেন, ‘মামলার বাদী মামুনুর রশিদ স্বীকার করেছেন, তাঁকে দিয়ে সামসুজ্জামান মামলাটি করিয়েছেন। তাই সামসুজ্জামান আমাকে নিয়ে যে ষড়যন্ত্রমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।’
কাওসার দাবি করেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ তাঁর ওপর জেল–জুলুম করেছে। তাঁর মিলকারখানা দখল করে নিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ২২ জুলাই তাঁকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।
মামলার কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, ১৩ নভেম্বর রংপুর মহানগরের কোতোয়ালি থানায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সংঘর্ষ নিয়ে একটি মামলা করেন মাহীগঞ্জ ২৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, গত ১৯ জুলাই রংপুর সিটি বাজারে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের অবৈধ অস্ত্রের গুলিতে তিনি আহত হন। এ মামলায় ১৮১ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় অনেক নিরীহ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
১৬ নভেম্বর মামুনুরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে মামুনুরকে বলতে শোনা যায়, তিনি আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ২৫ জন চিহ্নিত সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে মামলা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মহানগর বিএনপির সভাপতি সামসুজ্জামান ১৮১ জনের নাম দেন।
ভিডিওর ওই কথোপকথন ছিল রংপুর মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি কাওসার জামানের সঙ্গে মামলার বাদী মামুনুরের। ভিডিওতে মামুনুরের উদ্দেশে কাওসার বলেন, ‘১৮১ জনকে আসামি করে তুমি একটি মামলা করেছ কোতোয়ালি থানায়। এখানে নীলফামারীর আসামি আছেন। এখানে অনেক নিরীহ লোক আছেন। যাঁরা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। এটা কেন তুমি করলা?’
জবাবে মামুনুরকে বলতে শোনা যায়, ‘বিএনপির মহানগর আহ্বায়ককে (সামসুজ্জামান) আড়াই মাস আগে ২৫টি নাম দিই। ৯ কি ১০ তারিখ মামলাটি লেখা হয়েছে। আমি সই করলাম। তখন আমি অসংগতি দেখে জিজ্ঞাসা করলাম, এতগুলো নাম কেন? সে বলল, এগুলো ঠিক হয়ে যাবে। এতগুলো নাম দেওয়ার ইচ্ছা আমার ছিল না।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল হলে মামলার বাদী মামুনুর রশীদ আত্মগোপন করেছেন। তাঁর দুটি মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করে কথা বলা সম্ভব হয়নি।