গলা কাটা রক্তাক্ত অবস্থায় বাড়ির বাইরে এসে ঢলে পড়েন আশিকুল হক মোল্লা (৪০)। তৎক্ষণাৎ স্থানীয় লোকজন এগিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। পরে বাড়ির শয়নকক্ষে একটি বিছানায় তাঁর স্ত্রী তহুরা বেগম (৩০), দুই শিশুকন্যা আয়েশা আক্তার (১১) ও যারিনের (৬) লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। তবে তিনটি লাশের শরীরেই রক্ত বা কোনো জখমের চিহ্ন নেই।
ঘটনাটিকে রহস্যজনক বলছে পুলিশ। আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের কেউই ঘটনা সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো ধারণা দিতে পারছেন না। আশিকুল হক তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়েকে হত্যা করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন, নাকি অন্য কেউ তাঁদের হত্যা করেছে, তা নিয়ে চলছে জল্পনা। নিহত তিনজনের শরীরে জখমের চিহ্ন না থাকায় তাঁদের শ্বাসরোধে নাকি অন্য কোনোভাবে হত্যা করা হয়েছে, সেটিও নিশ্চিত নয়। আবার একই বিছানায় লাশ তিনটি পাশাপাশি রাখা নিয়ে পুরো হত্যাপ্রক্রিয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে নীলফামারী সদর উপজেলার চড়াইখোলা ইউনিয়নের দাড়োয়ানী বন্দর বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর জখম আশিকুল হক মোল্লা ওই ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম আবদুর রউফ মোল্লার ছেলে। তিনি কাঠ ও আসবাবের ব্যবসা করেন। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে নেন। সেখানে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
স্থানীয় লোকজন পরে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। বিষয়টি রহস্যজনক হওয়ায় রংপুর সিআইডি ক্রাইম সিনকে খবর দেওয়া হয়। বেলা পৌনে তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত শুরু করেছেন সিআইডি ক্রাইম সিনের সদস্যরা।
বেলা ১১টার দিকে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উৎসুক জনতার ভিড়। বাড়ির ভেতরে ও বাইরে ঘিরে রেখেছে র্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাড়ির সামনে একটি করাতকল (স মিল) এবং ‘আয়েশা অ্যান্ড যারিন’ নামে একটি আসবাবের দোকান রয়েছে। এসব আশিকুলের বলে জানান স্থানীয় লোকজন। আশিকুল এলাকায় বাবু নামে পরিচিত। যে বাড়িটিতে তাঁরা থাকতেন, সেই বাড়িটির চারদিক দেয়ালঘেরা। বাড়ির একদিকের ঘরে তাঁরা থাকতেন, অন্য ঘরগুলো ফাঁকা পড়ে আছে।
বিকেল চারটার দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নেয়। এ সময় বিছানার পাশে সবজি কাটার রক্তাক্ত চাকু (কাটারি) উদ্ধার করে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, ওই চাকু দিয়ে আশিকুল হকের গলা কাটা হয়েছে।
স্বজনেরা বলছেন, আশিকুল হক মানসিক চাপে ছিলেন। তাঁর চাচাতো ভাই জাকির হোসেন মোল্লা বলেন, ‘আমার ধারণা মতে, সে মানসিক চাপের কারণে এ ঘটনা ঘটাতে পারে। কিন্তু তাঁর স্ত্রী-সন্তানকে এভাবে হত্যা করতে পারে, এমনটাও মনে হচ্ছে না।’
আশিকুলের শাশুড়ি ও নিহত তহুরা বেগমের মা রাবেয়া বেগম (৫০) আহাজারি করে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকেই মোবাইলে আমার মেয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। সে বলেছে, তারা সবাই ভালো আছে। আজকে তাদের মৃত্যুর খবর পেলাম...।’
আশিকুলের ভাবি সাবিনা বেগম (৪০) বলেন, ‘ওই বাড়িতে তারাই (আশিকুলের পরিবার) থাকত। আর কেউ থাকে না। আমি শুনেছি, তাদের নাকি ব্যাংকে ঋণ আছে। এই নিয়ে নাকি তারা সমস্যায় ছিল।’
নীলফামারী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তানভিরুল ইসলাম বলেন, নীলফামারী সদর থানা-পুলিশের পাশাপাশি রংপুর ক্রাইম সিন টিম তদন্ত শুরু করেছে। লাশ উদ্ধার করে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। গুরুতর জখম আশিকুল হক মোল্লা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনাটি রহস্যজনক। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত কোনো কিছু বলা সম্ভব না।