বেনাপোল ডিগ্রি কলেজ
বেনাপোল ডিগ্রি কলেজ

বেনাপোল কলেজের কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ

যশোরের বেনাপোল ডিগ্রি কলেজ পরিচালনা কমিটি নিয়ে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের নেতা–কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তিনটি ‘ককটেলের’ বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক তৈরি করা হয়। আজ রোববার বিকেলে বেনাপোল স্থলবন্দর–সংলগ্ন বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

এর আগে দুপুরের দিকে কলেজের অধ্যক্ষ কামরুজ্জামানকে নিজের কার্যালয়ে জিম্মি করে কলেজ পরিচালনা কমিটি গঠন–সংক্রান্ত কাগজপত্রে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুজ্জামানকে (মধু) সভাপতি হিসেবে রেখে শার্শা উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মাসুদুর রহমান ও পৌর বিএনপির সভাপতি নাজিম উদ্দীন এ স্বাক্ষর নেন। কলেজের একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, মাসুদুর রহমান অধ্যক্ষের টেবিলের সামনে বসে কথা–কাটাকাটির এক পর্যায়ে দাঁড়িয়ে থাপ্পড় মারতে উদ্যত হন।

কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে বেনাপোল ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষকে মারতে উদ্যত হন বিএনপি নেতা মাসুদুর রহমান

কলেজসূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনার এক সপ্তাহ আগে বিএনপির অপর পক্ষ যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি নুরুজ্জামান লিটনকে সভাপতি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি মুজিবুর রহমানকে বিদ্যোৎসাহী সদস্য করে আরেকটি কমিটির তালিকা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান অধ্যক্ষ। এই কলেজের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ছিলেন আওয়ামী লীগের অনুসারী ইমদাদুল হক। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে কলেজটির কমিটি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে বিএনপির দুই পক্ষ। এর অংশ হিসেবে বিএনপির দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি কমিটি করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠিও পাঠায়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

কলেজের অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পর কলেজে নতুন পরিচালনা কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিএনপি থেকে নুরুজ্জামানকে সভাপতি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিকে সদস্য করে একটি কমিটির তালিকা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। বিএনপির মধ্যে গ্রুপিং আছে, তা তিনি জানতেন না। আজ রোববার মাসুদুর রহমান নামের বিএনপির এক নেতাসহ কয়েকজন কলেজ পরিচালনার কমিটির সভাপতি হিসেবে উপজেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুজ্জামানকে সভাপতি করে একটি কাগজ নিয়ে তাঁর কার্যালয়ে হাজির হন। স্বাক্ষর করতে রাজি না হওয়া মাসুদুর রহমান তাঁকে মারতে আসেন। পরে জোর করে তাঁরা স্বাক্ষর নিয়ে যান।

অভিযোগ অস্বীকার করে বেনাপোল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষকদের আমি সম্মান করি। তাঁকে (অধ্যক্ষ) মারতে যাইনি। একটু উত্তেজিত হয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলেছি। তা ছাড়া ওই অধ্যক্ষ আওয়ামী লীগের অনুসারী। তিনি একতরফাভাবে নুরুজ্জামানকে সভাপতি করে কলেজ ম্যানেজিং কমিটির আবেদন পাঠিয়েছেন। তিনি আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে দিচ্ছেন। এটা তাঁকে বলেছিলাম।’

বিএনপির দুইপক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আজ রোববার বিকেলে বেনাপোল স্থলবন্দর–সংলগ্ন বাজারে

এদিকে অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করে পাল্টা কমিটির কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদে বিকেলে বেনাপোল শহরে মিছিল বের করেন নুরুজ্জামানের অনুসারীরা। এ সময় মাসুদুর রহমানের লোকজন প্রতিহত করার চেষ্টা করলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় সড়কে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এক পক্ষ মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় আরেক পক্ষ ধাওয়া করে। তখন তিন–চারটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ভয়ে বাজারের ব্যবসায়ীরা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ছোটাছুটি করতে থাকেন।

এ বিষয় বেনাপোল বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল মিয়া বলেন, বেনাপোল কলেজ পরিচালনা কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপির নেতা নুরুজ্জামান ও মাসুদুর রহমানের লোকজনের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় কয়েকটি পটকা ফোটানো হয়। কে বা কারা ফুটিয়েছে, তা চিহ্নিত করা যায়নি।