মাগুরা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৩২ হাজার ৭০৮ ভোটের ব্যবধানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রানা আমির ওসমান (মোটরসাইকেল)। তিনি এই নির্বাচনে মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসান এবং মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীরেন শিকদারের সমর্থন পেয়েছিলেন। যদিও তাঁরা এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি।
রানা আমিরের কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন মাগুরা-১ আসনের সাবেক সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরসহ আওয়ামী লীগের একটি অংশের সমর্থন পাওয়া জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মো. রেজাউল ইসলাম।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, রানা আমির ওসমান পেয়েছেন ৮৩ হাজার ৫৭১ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রেজাউল ইসলাম পেয়েছেন ৫০ হাজার ৮৬৩ ভোট। একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন (এর মধ্যে ৪টি ইউনিয়ন মাগুরা-২ আসনে পড়েছে) গঠিত মাগুরা সদর উপজেলায় মোট ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২৩ হাজার ৫০৬ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৪২ হাজার ৫৮০ জন ভোট দিয়েছেন। যা মোট ভোটের ৪৪ দশমিক ০৭ শতাংশ।
আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদের এই নির্বাচন ঘিরে স্থানীয় নেতারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিলেন। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রানা আমির ওসমান বর্তমান দুই সংসদ সদস্যের সমর্থন পেয়েছেন। পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পঙ্কজ কুমার কুণ্ডু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র খুরশীদ হায়দারসহ দলের একটি অংশের সমর্থন পেয়েছেন। সংসদ সদস্যরা প্রকাশ্যে সমর্থন না দিলেও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের এই প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাতে দেখা গেছে।
অন্য দিকে রেজাউল ইসলামের পক্ষে মাঠে নেমেছিলেন মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর, বর্তমান সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবু নাসির, উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতাসহ একটি অংশ। নির্বাচনের প্রচারণার সময় উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের বিভক্তি স্পষ্ট হয়েছে।
নেতা-কর্মীরা আরও বলেন, ভোট গ্রহণের মাত্র চার দিন আগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক এই সভাপতি সরে গিয়ে রানা আমিরকে সমর্থন দেন। ফলে তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা রানার জয়ের ব্যবধান গড়ে দিয়েছে। সংসদ সদস্য সাকিব ও বীরেনের অনুরোধের কারণেই তিনি সরে দাঁড়ান বলে গুঞ্জন আছে। কারণ, জাহাঙ্গীর হোসেন যখন সরে যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছিলেন, তখন তাঁর পাশে ছিলেন মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীরেন শিকদারের ভাই ও শালিখা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বিমলেন্দু শিকদার, মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানের ফুপাতো ভাই মেহেদী হাসান প্রমুখ।
শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী লড়াইয়ে জয়ী হয়েছেন শরিয়তউল্লাহ হোসেন মিয়া। মোটরসাইকেল প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৪৪ হাজার ৯৪৭ ভোট। প্রথমবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এই প্রার্থী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হলেও দলে তাঁর কোনো পদ নেই। তিনি শ্রীকোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি কুতুবুল্লাহ হোসেন মিয়ার ছোট ভাই। তাঁর বাবা আকবর হোসেন মিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন।
এই প্রার্থীর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এম এম মোতাসিম বিল্লাহ পেয়েছেন ২৯ হাজার ২৮১ ভোট। তৃতীয় অবস্থানে থাকা বর্তমান চেয়ারম্যান মিয়া মাহামুদুল গনি শাহীন পেয়েছেন ১৩ হাজার ৯৬৮ ভোট।
উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই নির্বাচন ঘিরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা তিন প্রার্থীর পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছিলেন। সদর উপজেলা নির্বাচনে সংসদ সদস্যরা এক প্রার্থীদের সমর্থন দিলেও শ্রীপুরে কোনো প্রার্থীর পক্ষে তাঁদের প্রকাশ্যে অবস্থান নিতে দেখা যায়নি। তবে এ উপজেলায় ভোটারদের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক ভালো। শ্রীপুরে ৬০ দশমিক ২৪ শতাংশ ভোট পড়ে। ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই উপজেলায় মোট ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৪৯ হাজার ৬৫২ জন। এর মধ্যে ভোট পড়েছে ৯০ হাজার ১৫৩টি।