দরদরিয়া দুর্গে দৃশ্যমান কোনো কিছু আর নেই

২০১৫ সালের দিকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এ স্থানকে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়। বাস্তব রূপ পায়নি সেই উদ্যোগ।

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের দরদরিয়া দুর্গের স্থান। প্রত্নতাত্ত্বিক ওই স্থান থেকে ইটসহ সবকিছু উজাড় হয়ে গেছে। সম্প্রতি তোলা ছবি

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের দরদরিয়া গ্রামের ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দরদরিয়া দুর্গের ভূমির উপরিভাগের সব স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে। সেখানে স্থাপিত প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাইনবোর্ড দেখেও কিছু বোঝার উপায় নেই।

ইতিহাস–সম্পর্কিত বেশ কিছু বই ঘেঁটে ও স্থানীয় বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাপাসিয়ার দুর্গাপুর ইউনিয়নের তারাগঞ্জ এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে ইতিহাস বিখ্যাত একডালা দুর্গ ছিল। দুর্গটি দৈর্ঘ্যে ৫ মাইল ও প্রস্থে ছিল ২ মাইলের বেশি।

নদীর পাশে নির্মাণ করা ওই দুর্গের ভেতরে প্রবেশের জন্য ছিল পাঁচটি তোরণ। দুর্গটি স্থানীয় মানুষজনের কাছে ‘রানিমার ভিটা’ ও ‘রানি ভবানীর বাড়ি’ নামেও পরিচিত ছিল। রানি ভবানী বানিয়া রাজাদের শেষ বংশধর ছিলেন। তিনি ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দে এ দেশে মুসলিম অভিযানের সময় এ দুর্গে বসবাস করেছিলেন।

‘সম্প্রতি এই প্রত্নস্থান গেজেটভুক্ত হয়েছে। সংরক্ষিত পুরাকীর্তির তালিকায় এসেছে। এটি নিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে, সেখানে সিস্টেমেটিক ওয়েতে আমরা প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চালিয়ে অতীত ইতিহাস জানার চেষ্টা করব। দুর্গের সুরক্ষাকল্পে জনবল নিয়োগসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এ বিষয়ে আমরা মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করব।’
আফরোজা খান, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক

ইতিহাস বলছে, কাপাসিয়ার রায়েদ ইউনিয়নের দরদরিয়া গ্রামের দরদরিয়া দুর্গটি ছিল একডালা দুর্গের শাখা দুর্গ। ২০১৫ সালের দিকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এ স্থানকে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়। তখন সেখানে একটি সাইনবোর্ড টাঙানো হয়। সাইনবোর্ডটির ওপরের দিকে লেখা ছিল ‘প্রত্ন ঐতিহ্য স্থান’। মাঝখানে বড় করে লেখা ছিল ‘দরদরিয়া দুর্গ’। সম্প্রতি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটিতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে দুর্গের দৃশ্যমান কিছুই নেই। প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের সাইনবোর্ডের লেখাটিও মুছে গেছে।

বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের বাড়ির সামনে দিয়ে চলে যাওয়া সড়ক ধরে আধা কিলোমিটার উত্তর দিকে গেলেই দরদরিয়া দুর্গের অবস্থান। পিচঢালা মূল সড়ক থেকে বানার নদের দিকে ৩০০ মিটার পূর্বে দুর্গের ধ্বংসাবশেষ ছিল বলে স্থানীয় লোকজন জানান।

পরিদর্শনের সময় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন স্থানের আশপাশের বাসিন্দাদের মধ্যে দুর্গ নিয়ে খুব বেশি আগ্রহ দেখা যায়নি। বরং সেখানে টাঙানো সাইনবোর্ডের ছবি তুলতে এই প্রতিবেদককে নিরুৎসাহিত করেন তাঁরা। তবে দরদরিয়া খেয়াঘাটে বেশ কয়েকজন বয়স্ক বাসিন্দা এ বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তথ্য দিয়েছেন। প্রত্নতাত্ত্বিক এই নিদর্শন সুরক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার দাবিও করেছেন তাঁরা।

দরদরিয়া গ্রামের বাসিন্দা মকবুল হোসেন জানান, ১৫ থেকে ২০ বছর আগেও এখানে অন্তত ১০ ফুট দৈর্ঘ্যের ২-৩টি ইটের পুরোনো দেয়াল ছিল। এরপর লোকজন এসব দেয়ালের ইট খুলে নিয়ে গেছেন। বর্তমানে মাটির ওপরে আর দুর্গের কোনো অংশ দেখা যায় না।

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন স্থানটি পরিদর্শনের সময় ছবি তুলতে গেলে পাশের এক বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন ৪০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। দরদরিয়া দুর্গের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এইখানে আসলে কিচ্ছু নাই। হুদাই দুর্গ দুর্গ করে। আন্তাজি কয়, এখানে দুর্গ আছে। আমগোরে এখান থেকে উঠায়া দেওয়ার জন্য মানুষের এইটা একটা কৌশল।’ তাঁর পরিচয় জিজ্ঞেস করলে তিনি তা দিতে রাজি হননি। একপর্যায়ে তিনি সেখান থেকে চলে যান।

জানতে চাইলে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সম্প্রতি এই প্রত্নস্থান গেজেটভুক্ত হয়েছে। সংরক্ষিত পুরাকীর্তির তালিকায় এসেছে। এটি নিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে, সেখানে সিস্টেমেটিক ওয়েতে আমরা প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চালিয়ে অতীত ইতিহাস জানার চেষ্টা করব। দুর্গের সুরক্ষাকল্পে জনবল নিয়োগসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এ বিষয়ে আমরা মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করব।’