কিশোরগঞ্জ-২ আসন

স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামান ও ‘বিশেষ ফোন’ নিয়ে নানা আলোচনা

আবদুল কাহার আকন্দ, আখতারুজ্জামান ও সোহরাব উদ্দিন
ছবি: সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া) আসন থেকে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকার মাঝি হয়েছেন পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাহার আকন্দ। এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা নিয়ে জয় পাওয়া সোহরাব উদ্দিন। তবে এই আসনে সব আলোচনা এখন বিএনপি থেকে ষষ্ঠবার বহিষ্কার হওয়া নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামানকে নিয়ে।

কারণ, মাঠে গুঞ্জন আছে, নৌকাসহ অন্য প্রার্থীর নেতা-কর্মীদের সরকারের একটি সংস্থা থেকে ফোন দিয়ে আখতারুজ্জামানের হয়ে মাঠে নামার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সোহরাব উদ্দিন ৩১ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগও দেন। ফলে নৌকার প্রার্থীসহ অন্যদের ‘মাথাব্যথার কারণ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে আখতারুজ্জামান।

স্থানীয় লোকজন বলেন, এ আসনে মোট প্রার্থী ছয়জন হলেও মূলত শুরু থেকেই নির্বাচনী মাঠ গরম হয় তিন প্রার্থীকে ঘিরে। কিশোরগঞ্জ-২ আসন থেকে প্রথমবারের মতো নৌকার মাঝি হয়েছেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আবদুল কাহার আকন্দ। এই আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সোহরাব উদ্দিন (ঈগল প্রতীক)। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন বিএনপি থেকে ষষ্ঠবার বহিষ্কার হওয়া নেতা মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান (ট্রাক প্রতীক)।

বর্তমান সংসদ সদস্য ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে ভোটের মাঠ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। তবে নিজে ভোটে না থাকলেও তাঁর প্রকাশ্য সমর্থন গেছে আখতারুজ্জামানের পক্ষে। তিনি ও তাঁর অনুগতরা আখতারুজ্জামানের পক্ষে ভোট চাইতে শুরু করার পর লড়াই ত্রিমুখী মাত্রা পায়। বিশেষ করে এক সপ্তাহ আগ থেকে মাঠে প্রচার পায় ঈগল ও নৌকার অনেক সমর্থকেরা ফোন পাচ্ছেন। কাউকে ডেকে নিয়ে আবার কাউকে শুধু ফোনে ট্রাক প্রতীকের হয়ে কাজ করার অনুরোধ করা হচ্ছে।

ঈগলের কর্মীরা বলেন, শফিকুল ইসলাম, শওকত উসমান, তসলিম উদ্দিন, নুরুল ইসলাম, মশিউর রহমান, কামরুজ্জামান, এমদাদুল হক, কামাল হোসেন, মোবারক হোসেন ও মনিরুজ্জামান ভূঁইয়াসহ কয়েকজন কাছে সম্প্রতি অপরিচিত মুঠোফোন নম্বর থেকে ফোন পান। তাঁদের বলা হয়, তাঁরা যেন ঈগল প্রতীকের হয়ে কাজ না করে অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামানের হয়ে মাঠে নামেন। এ বিষয়ে সোহরাব উদ্দিন ৩১ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। একই অভিযোগ নৌকা প্রতীকের পক্ষ থেকেও করা হয়। তবে তাঁরা মৌখিকভাবে বিষয়টি জানায়।

সোহরাব উদ্দিনের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত ২১ ডিসেম্বর থেকে ঈগল প্রতীকের সমর্থকদের কটিয়াদীর চারিপাড়া সরকারি মৎস্য প্রজননকেন্দ্রের ডরমিটরি ভবনে ডেকে নেওয়া শুরু হয়। সেখানে নিয়ে ভয়ভীতি দেখানো এবং ট্রাকের হয়ে কাজ করার কথা বলা হয়। সেখানে ডাক পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে শফিকুল ইসলাম একজন। তিনি কটিয়াদী বাজারের একজন ব্যবসায়ী। শফিকুল বলেন, ‘আমাকে ফোন করে একটি স্থানে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে নিয়ে ট্রাকের হয়ে কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে ব্যক্তিটি আচরণে ছিল খুবই বিনয়ী।’

সোহরাব উদ্দিন তাঁর করা অভিযোগে তিনটি ফোন নম্বর যুক্ত করেছেন। বলা আছে ওই তিনটি ফোন নম্বর থেকে বেশির ভাগ ফোন করা হয়। তিনটি নম্বরের মধ্যে দুটি নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। সাদাত পরিচয়ের সঙ্গে উল্লেখ থাকা নম্বর খোলা ছিল। ফোন ধরার পর ব্যক্তি নিজেকে আইনজীবী পরিচয় দিয়ে ফোন কেটে দেন।

ঈগল প্রতীকের প্রার্থী সোহরাব উদ্দিন বলেন, ‘আমার সক্রিয় অসংখ্য কর্মী ফোন পেয়েছেন। আমার পক্ষ ছেড়ে ট্রাকে ওঠার পরামর্শ ছিল অজ্ঞাত ব্যক্তিদের। বাধ্য হয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছি। এই বিষয়ে কোনো কম্প্রোমাইজ (মধ্যস্থতা) নয়, আমি আইনি সমাধান চাই।’

ফোন না ধরায় চেষ্টা করেও নৌকার আবদুল কাহার আকন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে কটিয়াদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের (আওয়ামী লীগের) দলের প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের একইভাবে ডেকে নিয়ে কিংবা ফোন করে ট্রাকের পক্ষে কাজ করার কথা বলেছেন সরকারের একটি সংস্থার পরিচয় দেওয়া লোকজন। আমরা আবার এই তথ্য নৌকার প্রার্থীকে জানিয়েছি। তিনি বিষয়টি দল ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনদের নজরে এনে রেখেছেন।’

ফোনের বিষয়ে কথা বলা যায়নি আখতারুজ্জামানের সঙ্গে। তবে উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস আখতারুজ্জামানের হয়ে মাঠে সরব রয়েছেন। তিনি বলেন, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে নির্বাচনে নানা ইস্যু সামনে আনা হয়। গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ভিত্তিহীন কথাকে সত্য বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে প্রতিপক্ষরা। সরকারের একটি সংস্থা আখতারুজ্জানের হয়ে কাজ করছে—এই অভিযোগও ভিত্তিহীন।

জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আবুল কালাম আজাদ আজ শনিবার মুঠোফোনে বলেন, ফোনের বিষয়ে তদন্ত চলছে। একই অভিযোগ আরও নানাভাবে তাঁদের কাছে আসছে। তবে এই বিষয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।