বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে বাসটি দুমড়েমুচড়ে গেছে। রোববার সকালে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার মাঝিগাতি এলাকায়
বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে বাসটি দুমড়েমুচড়ে গেছে। রোববার সকালে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার মাঝিগাতি এলাকায়

সন্তানসহ ইতালিপ্রবাসী স্বামীর কাছে যাওয়া হলো না তানিয়ার

সন্তানকে নিয়ে ইতালিপ্রবাসী স্বামীর কাছে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তানিয়া আফরোজ (২৮)। ইতালি থেকে স্বামীর পাঠানো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিতে মা তহুরা বেগমকে (৫৫) নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন তানিয়া। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় সব প্রস্তুতি শেষ হয়ে গেল। স্বামীর কাছে আর যাওয়া হলো না তানিয়ার।

আজ রোববার সকাল পৌনে আটটার দিকে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার মাঝিগাতি এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ ছয়জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তানিয়া আফরোজ ও তাঁর মা তহুরা বেগমও আছেন।

নিহত তানিয়া আফরোজ

নিহত তানিয়া আফরোজের ভগ্নিপতি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, তানিয়া আফরোজের স্বামী আসলাম উদ্দিন কুদ্দুস দীর্ঘদিন ধরে ইতালিতে থাকেন। তাঁদের ৯ বছরের কন্যাসন্তান আছে। তানিয়া ও মেয়েকে ইতালিতে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠান আসলাম। সেই কাগজপত্র নিতে ঢাকায় যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর শাশুড়ি ও তানিয়া মারা গেছেন। আসলাম উদ্দিন ছুটি শেষে দুই-আড়াই মাস আগে ইতালি ফেরত যান। এবার স্ত্রী ও মেয়েকে ইতালিতে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছিলেন।

স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আজ সকালে খুলনা থেকে ইমাদ পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন তানিয়া আফরোজ, তহুরা বেগমসহ অন্যরা। বাসটি কাশিয়ানী উপজেলার মাঝিগাতিতে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ট্রাকের সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায় এবং বাসটি খাদে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তহুরা বেগমসহ বাসের ৫ যাত্রী নিহত ও ২৫ যাত্রী আহত হন। পরে হাসপাতালে মারা যান তানিয়া। খবর পেয়ে স্বজনের হাসপাতাল থেকে মা ও মেয়ের লাশ নিয়ে খুলনার টুটপাড়ার বাড়িতে ফেরেন। মৃত্যুর খবর পেয়ে তানিয়ার স্বামী আসলাম উদ্দিন ইতালি থেকে রওনা হয়েছেন। তিনি দেশে আসার পর মা ও মেয়ে দুজনের লাশ দাফন করা হবে।

নিহত তহুরা বেগম

নিহত অপর চারজন হলেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সুলতানশাহী গ্রামের মোতালেব শেখের ছেলে রহিজ শেখ (২৪), সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সাতালী গ্রামের সৈয়দ এরশাদ আলীর ছেলে সৈয়দ মামশাদ আলী (৩১), বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার টাউন নওয়াপাড়া গ্রামের আ. সামাদ গাজীর ছেলে সাইদুর রহমান (৪৪), মোল্লাহাট উপজেলার সারুলিয়া গ্রামের মো. হাছির মোল্যার ছেলে মো. সাগর মোল্যা (২৪)।

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার উপপরিদর্শক মো. সেলিম মিয়া ও গোপালগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক শিপলু আহমেদ দুর্ঘটনায় ছয়জন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

কাশিয়ানী থানার উপপরিদর্শক মো. সেলিম মিয়া বলেন, ঘটনাস্থলেই বাসের এক নারীসহ পাঁচ যাত্রী নিহত হন। আহত হন ২৫ যাত্রী। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করে। গুরুতর আহত ১৭ জনকে কাশিয়ানী ও মুকসুদপুর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তানিয়া আফরোজ নামের এক নারী মারা যান।