কাফনের কাপড় পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি। আজ বেলা তিনটার দিকে
কাফনের কাপড় পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি। আজ বেলা তিনটার দিকে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

ফটকে তালা দিয়ে কাফনের কাপড় পরে অবস্থান শিক্ষার্থীদের

সেশনজট কমানোর দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা দেওয়ার পর কাফনের কাপড় পরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার বেলা ১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। বিক্ষুব্ধ ওই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শহরগামী বেলা আড়াইটার নির্ধারিত ট্রেনও আটকে রেখেছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়েছেন।

বিকেল চারটা পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। শাটল ট্রেনও বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে আটকে রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা অনুষদভুক্ত শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের যাত্রা শুরু হয় ২০১৫ সালে। তবে এখন পর্যন্ত এ বিভাগে কোনো শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ আবার আট বছর পার হলেও একটি ব্যাচেরও স্নাতকোত্তর শেষ হয়নি। এ বিভাগের মোট শিক্ষার্থী রয়েছেন ২৫০ জন। উপাচার্য শিরীণ আখতার শিক্ষা অনুষদের ডিন এবং মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ আবুল মনছুর এই বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

আজ বেলা দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে গিয়ে দেখা যায়, ৬০ থেকে ৭০ জন শিক্ষার্থী মাথায় ও শরীরে সাদা কাপড় জড়িয়ে অবস্থান করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক বন্ধ করে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের হাতে ‘বয়স গেল শেষ হয়ে, কী করব আর অনার্স করে; ‘ক্রীড়া বিজ্ঞানে জট কেন? শাসন জবাব চাই’; ‘একাডেমিক ক্যালেন্ডার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান–সংবলিত প্ল্যাকার্ড। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির একাধিক সদস্য, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতিকেও ঘটনাস্থলে দেখা গেছে।

শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তরের নতুন ব্যাচের শিক্ষার্থী এমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, আট বছরে একটি ব্যাচেরও স্নাতকোত্তর শেষ হয়নি। অন্য বিভাগে যেখানে চার বছরে স্নাতক শেষ হয়, সেখানে আমাদের বিভাগের চারটি সেমিস্টারও শেষ হয় না। বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ জানালেও প্রশাসন এসব সমস্যার সুরাহা করেনি। বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন করতে হচ্ছে।

যাতায়াতের প্রধান বাহন শাটল ট্রেন আটকে রাখায় বিপাকে পড়েন শিক্ষার্থীরা

বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারের মো. সফিউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ ও একাডেমিক ক্যালেন্ডার তৈরি করতে হবে। বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। অবস্থান কর্মসূচি কতক্ষণ চলবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপাচার্যকে এসে সমস্যা সমাধানের ঘোষণা দিতে হবে। না দেওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।  

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, এটি একাডেমিক বিষয়। শিক্ষার্থীদের বোঝানো হচ্ছে। ফটকে তালা দেওয়াটা সমীচীন হয়নি।

বিভাগের সভাপতি মোহাম্মদ আবুল মনছুর প্রথম আলোকে বলেন, নীতিমালার জটিলতার কারণে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যায়নি। এ কারণে সঠিক সময়ে পরীক্ষা ও ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয়নি। এর ফলে জট দেখা দিয়েছে। তিনি এ সমস্যা সমাধানের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে উপাচার্য শিরীণ আখতারের মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে তিনি সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন লোকবল ছাড়াই এই বিভাগ খোলা হয়েছিল। নীতিমালার কারণে এখনো তাঁরা স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারেননি। যেহেতু সংকট রয়েছে, তাই কীভাবে জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যায়, সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন।

এদিকে মূল ফটক আটকানোর ফলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শহরে যেতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যাতায়াতের বাস বিকল্প রাস্তা দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের হলেও বন্ধ রয়েছে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের অন্যতম প্রধান বাহন শাটল ট্রেন।  

ট্রেনের চাবি (রিভার্স) নিয়ে যাওয়ার কারণে বেলা আড়াইটায় ছেড়ে যাওয়ার নির্ধারিত ট্রেন বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে আটকে রয়েছে। জানতে চাইলে শাটল ট্রেনের লোক মাস্টার (ট্রেনচালক) মোহাম্মদ হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, কয়েকজন ছাত্র তাঁদের কাছ থেকে চাবি ছিনিয়ে নিয়েছে। এ কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

সেশনজট কমানোর দাবিতে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবারই প্রথম নয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি স্থায়ী শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, সেশনজট কমানো, ফল প্রকাশসহ ছয় দফা দাবিতে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিলেন শিক্ষার্থীরা।