‘আমার স্বামী শুক্রবার রাতের বেলা গ্যাছে। রাত ৮টার দিকে আমি নিজে গাড়িতে উঠায় দিয়ে আইছিলাম। বলছিল, “জাহাজটা লোড হইলে এক সপ্তাহ পর ঘাটে রাইখা বাড়ি আসপানি।” বইল্যা গেল, আর তো আসলো না।’ অসহায়ের মতো গতকাল মঙ্গলবার রাতে নিজ বাড়িতে কথাগুলো বলছিলেন চাঁদপুরে এমভি আল-বাখেরা জাহাজে হত্যার শিকার আমিনুর রহমান মুন্সীর (৪৮) স্ত্রী পপি বেগম।
চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার ইশানবালা খালের মুখে নোঙর করা জাহাজে হত্যার শিকার সাতজনের একজন আমিনুর রহমান মুন্সী। তিনি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের পাঙ্খারচর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি আল–বাখেরা জাহাজে সুকানির কাজ করতেন। গতকাল রাত ৯টার দিকে আমিনুরের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছালে কান্নার রোল পড়ে যায়।
এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন জাহাজের ইঞ্জিনচালক একই উপজেলার সালাউদ্দিন ফকির (৪০)। তাঁর মরদেহ গতকাল রাত ১০টার দিকে লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের এগারোনলী গ্রামে তাঁর বাড়িতে পৌঁছায়। তিনি ওই জাহাজের ইঞ্জিনচালক ছিলেন।
গতকাল রাতে এই দুজনের মরদেহ দাফন করা হয়।
আমিনুরের পরিবার সূত্রে জানা যায়, সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হিসেবে প্রায় ১২ বছর ধরে জাহাজে কাজ করছিলেন তিনি। গত শুক্রবার গ্রামের বাড়ি নড়াইল থেকে কাজে গিয়েছিলেন। এবার ছুটিতে বাড়ি ফিরে বোনের দেওয়া জমিতে তাঁর নতুন ঘর তোলার কথা ছিল। কিন্তু চার দিনের ব্যবধানে একই বাড়িতে আমিনুরের নিথর দেহ ফিরেছে।
আমিনুরের স্ত্রী পপি বেগম স্বামী হত্যার বিচার দাবি করছিলেন। বলছিলেন, ‘আমাদের কিছু নাই। আমার স্বামী ছাড়া আপন কেউ ছিল না। যারা আমার স্বামীরে মারছে, আমরা তাদের বিচার চাই।’
এগারোনলী গ্রামে সালাউদ্দিনের বাড়িতেও গতকাল রাতে একই পরিস্থিতি হয়। স্বজনেরা বলছিলেন, সালাউদ্দিন ২০ বছর ধরে জাহাজে চাকরি করছিলেন। মা ও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ছয় সদস্যের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। এ ঘটনায় দিশাহারা তাঁর পরিবার।
সালাউদ্দিনের ছেলে নাইম ফকির বলেন, ‘এইভাবে যদি চলতে থাকে, তাহলে আজকে আমাদের ক্ষতি হয়েছে, কালকে আরেকজনের হবে। আজকে যেমন আমরা রাস্তায় নামছি, কালকে আরেক পরিবার রাস্তায় নামবে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।’