সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় ১২ বছর বয়স্ক ভাতা পাওয়ার পর বয়স কমের জন্য ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। ছয় মাস ধরে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেও এর কোনো সুরাহা না পেয়ে কষ্টে জীবন চালাচ্ছেন খুদেজা বিবি।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা ও ভুক্তভোগী খুদেজার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের ঐয়ারকোনা গ্রামের মৃত আবদুল গনির স্ত্রী খুদেজা বিবি ২০০৯ সালে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ পান। ১২ বছর ধরে ভাতার অর্থ উত্তোলনও করেন তিনি। কিন্তু গত বছর অনলাইন ডেটাবেজ করার সময় জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স কম থাকায় বাতিল হয়ে যায় তাঁর ভাতার কার্ডটি। এর ফলে ছয় মাস ধরে ওই বৃদ্ধা বয়স্ক ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
জাতীয় পরিচয়পত্রে বৃদ্ধা খুদেজা বিবির জন্ম তারিখ দেওয়া হয় ১০ নভেম্বর ১৯৭৪। তাঁর একমাত্র ছেলের জন্মতারিখ দেখানো হয়েছে ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫। সে অনুযায়ী, ছেলে মো. আবদুল মুহিত (প্রতিবন্ধী) তাঁর মায়ের চেয়ে মাত্র ১০ মাসের ছোট।
জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী, খুদেজা বিবির জন্ম তারিখ ১৯৫৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। বয়সের এমন পার্থক্য সংশোধন করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে অসহায় দরিদ্র ওই পরিবারটিকে। নানা কাগজপত্র জমা দেওয়ার বেড়াজালে পড়েছে তারা।
খুদেজা বিবি বলেন, ‘একটানা ১২ বছর বয়স্ক ভাতা পাওয়ার পর হঠাৎ করে জানতে পারি, আমার বয়স কম থাকায় আমার বয়স্ক ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। বয়স্ক ভাতার এ টাকা আমার শেষ বয়সে ওষুধের কাজে লাগত। জীবনের শেষ সময় ওষুধের টাকা না পেয়ে কষ্টে আছি। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য দৌড়ঝাঁপ করে কোনো সুরাহা পাচ্ছি না।’
ওই বৃদ্ধার প্রতিবন্ধী ছেলে আবদুল মুহিত বলেন, ‘আমার মায়ের বয়স ৭০–এর ওপরে হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রের কার্ডে ভুল করে ৪৯ দেখানো হয়েছে। মা-ছেলের বয়স কী করে সমান হয়। এ ভুলের জন্য মায়ের ভাতার কার্ড বাতিল হওয়ায় আমরা অর্থকষ্টে ভুগছি। ৬ মাস ধরে সংশোধনের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছি। বর্তমানে আবেদনটি সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে রয়েছে। এই কাগজ, ওই কাগজ, কত কাগজ দিলাম। কিন্তু এখনো জাতীয় পরিচয়পত্রটি ঠিক হলো না।’
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুদ্দীন বলেন, ২০০৮ সালে ভোটার তালিকার ডেটা এন্ট্রিতে ভুল হতে পারে। সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে সব কাগজপত্র নিয়ে গেলে সংশোধন হয়ে যাবে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স কম থাকায় অনলাইনে ডেটা করা যায়নি। এর ফলে তাঁর বয়স্ক ভাতার কার্ডটি বাতিল হয়েছে। তবে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন হলে পুনরায় তাঁর ভাতার কার্ড ইস্যু করা হবে। তিনি বলেন, অনেকে জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতির মাধ্যমে বয়স বাড়িয়ে ভাতা নিয়েছে। অনলাইনে এগুলো এখন বাতিল হচ্ছে।