আশুলিয়ায় তিন খুন

স্বামী-সন্তানসহ শাহিদার মৃত্যুতে নির্বাক পরিবার, হত্যার বিচার চায়

ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ার একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট থেকে শনিবার রাতে স্বামী-সন্তানসহ শাহিদা বেগমের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ
ছবি: প্রথম আলো

কৃষক আয়েন উদ্দিন ও গৃহবধূ ফুলজান বেগম দম্পতির সংসারে ছিল চার মেয়ে। তাঁদের মধ্যে বড় মেয়ে শাহিদা বেগমের (৪০) লড়াইটা একটু অন্য রকম। ছোটবেলা থেকে অন্যের বাড়িতে কাজ করে বড় হয়েছেন তিনি। একপর্যায়ে ঢাকায় পাড়ি জমান। সেখানে কাজে করে বাড়িতে মা–বাবাকে সংসারের খরচ পাঠাতেন। একসময় নিজের সংসার হলো। সেই সংসারে স্বামী-সন্তানসহ খুন হয়েছেন তিনি। খুনের পর অনেকটা সময় পেরোনোয় লাশে পচন ধরায় মেয়েকে শেষবারের মতো দেখতেও পারেননি আয়েন-ফুলজান দম্পতি।

গত শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ার একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট থেকে স্বামী মুক্তার হোসেন (৪৭), ছেলে মেহেদি হাসানসহ (১৩) শাহিদা বেগমের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁরা লাশ উদ্ধারের তিন দিন আগে খুন হন বলে পুলিশের ধারণা।

সাভারের আশুলিয়ায় ফ্ল্যাট থেকে গলা কাটা লাশ উদ্ধার হওয়া বাবুল হোসেন, তাঁর স্ত্রী শাহিদা বেগম ও তাঁদের একমাত্র সন্তান মেহেদী হাসান

শাহিদা বেগমের বাবার বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা মধ্যপাড়া গ্রামে। তাঁর স্বামীর বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার লোহাগড়া গ্রামে। ময়নাতদন্ত শেষে আজ সোমবার মুক্তার হোসেনের গ্রামের বাড়িতে তিনজনের লাশ দাফন করা হয়েছে।

আজ সকালে বাগমারার মধ্যপাড়া গ্রামে শাহিদা বেগমের বাড়িতে গিয়ে তাঁর মা–বাবাকে নির্বিকার অবস্থায় দেখা যায়। ভোরে তাঁরা মেয়ে, জামাতা ও নাতির লাশ ঠাকুরগাঁওয়ে পাঠিয়ে বাড়িতে ফিরেছেন। বাবা আয়েন উদ্দিন বলেন, প্রায় ১৬-১৭ বছর আগে তাঁর মেয়ে শাহিদা বেগম কাজের সন্ধানে ঢাকায় যান। আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। সেখানেই ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার মুক্তার হোসেনের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। ২০১০ সালে বিয়ে হয় তাঁদের। এটি শাহিদা বেগমের প্রথম বিয়ে হলেও স্বামী মুক্তার হোসেনের ছিল দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম পক্ষের সন্তানসহ মুক্তার-শাহিদা দম্পতি ১০ বছর ধরে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় থাকতেন। জামাতা ও মেয়ের সঙ্গে তাঁদের নিয়মিত যোগাযোগ হতো। সর্বশেষ গত ২৭ সেপ্টেম্বর মেয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর। চার মাস আগে তাঁরা বেড়াতেও এসেছিলেন।

আয়েন উদ্দিনের ভাষ্য, তাঁর মেয়ে ও জামাতার সঙ্গে কারও বিরোধ ছিল না। কেন তাঁদের খুন করা হলো, এ নিয়ে তাঁদের কোনো ধারণাই নেই।

নিহত শাহিদা বেগমের মা ফুলজান বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, মেয়ের ঘরে ফ্রিজ থেকে বের করা মাংস পানিতে ডোবানো ছিল বলে পুলিশ তাঁদের জানিয়েছে। বাসায় কোনো অতিথি আসতে পারে, এ জন্য হয়তো মাংস ফ্রিজ থেকে বের করা হয়েছিল বলে ধারণা করছেন তিনি।