কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের গাঙ্গাটিয়া এলাকার জমিদার বংশের মানবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী চৌধুরীর মৎস্য খামারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
মালিকপক্ষের অভিযোগ, খামারের দখল না পেয়ে বিএনপির রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এলাকার এক ব্যক্তি এ হামলা চালান। তিনি ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের লোকজনকেও তাঁর দলে ভিড়িয়েছেন।
এ ঘটনায় সাদ্দাম হোসেন (২৮) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। সাদ্দাম জেলা ছাত্রলীগের সদস্য। হামলার ঘটনায় অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন। রোববার দুপুরের দিকে হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজন চন্দ্র সরকার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনিন্দ্য মণ্ডল ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হোসেনপুর উপজেলার গাঙ্গাটিয়া এলাকার মানবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর পানান বিলে প্রায় ৮৫ একর জায়গাজুড়ে ৮টি মৎস্য খামার (ফিশারি) রয়েছে। কল্যাণী ফিশ প্রোডাক্টস লিমিটেড নামে যৌথ মালিকানায় খামারগুলো পরিচালিত হচ্ছে। শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শতাধিক সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মৎস্য খামারে হামলা চালায়। এ সময় তারা ঢাকা থেকে মাছ কিনতে আসা ব্যবসায়ীদের তিনটি ট্রাক আটকে দেয় ও কয়েক লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
পরে মিছিল নিয়ে মৎস্য খামারে গিয়ে হামলা করে পাঁচটি মোটরসাইকেলসহ খামারের দুটি কার্যালয় ভাঙচুর করে। এ সময় হামলাকারীরা খামারের অংশীদার মুখলেছুর রহমানসহ বাধা দিতে আসা কয়েকজনের ওপর হামলা চালায়। এতে খামারে কাজ করা কবির হোসেন (৩৮), সুমন মিয়া (৪০) ও জুনায়েদ মিয়া (৩২) আহত হন। আহত ব্যক্তিদের কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মৎস্য খামারের অংশীদার মুখলেছুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় গোলাপ মিয়ার নেতৃত্বে শতাধিক সন্ত্রাসী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা করে। গোলাপ মিয়া বিএনপি করার কারণে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। গোলাপ তাঁদের খামারে পোনা সরবরাহ করতেন। এখন তিনি খামারের একটি অংশ দখলের চেষ্টা করছেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে গোলাপ নানা হুমকি ও চাঁদা দাবি করে আসছেন। স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের লোকজনও তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। শনিবারের অতর্কিত হামলায় তাঁরা আতঙ্কিত। এ ঘটনায় থানায় মামলা করা হবে।
হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে গোলাপ মিয়া বলেন, ২০১১ সাল থেকে তিনি এ মৎস্য খামারের অংশীদার। ২০২২ সাল পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে লেনদেন ঠিক ছিল। এর পর থেকে টাকা নিয়ে টালবাহানা চলছে। তিন কোটি টাকার মতো তাঁর পাওনা এ প্রতিষ্ঠানে। টাকা না দিয়েই তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। বিষয়টি নিয়ে তিনি সেনা ক্যাম্পসহ বিভিন্ন জায়গায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। শনিবার রাতে খামারে কে বা কারা হামলা চালিয়েছে, এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। তবে অংশীদারীর টাকা না দেওয়ায় খামার থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে তিনটি মাছের ট্রাক আটকে দিয়ে চাবি নিয়ে নেয়।
এ ব্যাপারে কথা বলতে জমিদার মানবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী মুঠোফোনে চেষ্টা করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, হোসেনপুরের ঐতিহ্যবাহী একটি পরিবারের খামারে ন্যক্কারজনক হামলা হয়েছে। তাঁরা এর তীব্র নিন্দা জানান। ঘটনায় যদি কোনো বিএনপির নেতা-কর্মীর জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়, তাহলে তাঁর বিষয়ে দলীয়ভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হোসেনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারুফ হোসেন এ বিষয়ে রোববার সন্ধ্যায় বলেন, ঘটনায় থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। সাদ্দাম হোসেন নামের একজনকে শনিবার ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়েছে। মৎস্য খামারে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, হামলার অভিযোগ পাওয়ামাত্রই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। একজনকে আটক করা হয়েছে। বাকি জড়িত ব্যক্তিদেরও দ্রুত আটক করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।