মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে প্রায় পাঁচ হাজার লিচুগাছ রয়েছে। দেশজুড়ে বেশ খ্যাতি রয়েছে এখানকার লিচুর।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার মঙ্গলবাড়িয়া লিচু গ্রামের লিচুচাষি আল মামুন। তাঁর রয়েছে ৪০টি লিচুগাছ। মুকুল আর লিচুর গুটিতে ভরা ছিল গাছগুলো। আশা করেছিলেন বাম্পার ফলনের। কিন্তু কয়েক সপ্তাহের টানা খরা আর প্রচণ্ড তাপের কারণে ২৫টি লিচুগাছের লিচু ঝরে পড়েছে। যে ১৫ গাছে কিছু লিচু আছে, সেগুলোর বেশির ভাগ লিচুর অর্ধেক অংশ পুড়ে শুকিয়ে কালো হয়ে গেছে। আর অর্ধেক অংশ সবুজ।
একই পরিস্থিতি গ্রামের নোমান মিয়া, মো. খসরু ও আলমগীর হোসেনের চার শতাধিক লিচুগাছের। গত কয়েক দিনের অনাবৃষ্টিতে আর গরমের তাপে বাগানের প্রায় সব গাছের লিচু ঝরে পড়েছে। ছফির উদ্দিনের শতাধিক গাছের মধ্যে বেশির ভাগ লিচুগাছের লিচু খরায় ঝরে পড়ছে। যেগুলোতে কিছু লিচু আছে, সেগুলোও শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলবাড়িয়া এলাকার অনেকের কাছে প্রধান অর্থকরী ফসল লিচু। চাষিরা জানান, এ বছর বাম্পার ফলনের আশা দেখিয়েও খরার কারণে লিচু ঝরে পড়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। প্রচণ্ড খরায় লিচু শুকিয়ে আকার ছোট হয়ে গেছে এবং কিছু লিচুর অর্ধেক অংশ কালো হয়ে গেছে। প্রায় দুই থেকে তিন সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
বৃষ্টি থাকলে আমরা এখন লিচু ভাঙা শুরু করতে পারতাম। কিন্তু খরার কারণে লিচুচাষিদের মাথায় হাত।ছফির উদ্দিন, লিচুচাষী
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের প্রতিটা বাড়ির উঠান, বাড়ির সামনের অংশ, পুকুরপাড়, খেতের আইলসহ চারদিকে কয়েক হাজার লিচুগাছ। গ্রামের প্রায় এক বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে অন্তত পাঁচ হাজার লিচুগাছ রয়েছে। যে কারণে গ্রামটি এখন লিচু গ্রাম হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ গাছই এখন লিচুশূন্য। অথচ কয়েক দিন আগেও লিচুর গুটিতে ভরপুর ছিল লিচুগাছ।
গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কৃত্রিম মেশিন দিয়ে লিচুগাছে পানি ছিটাচ্ছেন লিচুচাষি মো. রাজিব। তিনি বলেন, ‘এ বছর লিচুগাছ মুকুলে ভরপুর ছিল। আমরা আশা করেছিলাম বাম্পার ফলনের। আমাদের নিজস্ব দুই শ গাছ রয়েছে। এ ছাড়া শতাধিক গাছ আরও কিনে রেখেছিলাম। এখন ধানখেতের পাশে যে গাছগুলো রয়েছে, সে গাছগুলোর লিচু ভালো রয়েছে। তবে অন্য চাষিদের লিচুর অবস্থা খুবই খারাপ।’
এ গ্রামের লিচু দেশ-বিদেশে বিখ্যাত। এখন প্রতিটি গাছ টসটসে লিচুতে ভরপুর থাকার কথা। কিন্তু টানা তাপপ্রবাহ এই পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে। লিচুচাষি আল মামুন বলেন, তাঁর ৪০টি গাছের মধ্যে গত এক সপ্তাহের মধ্যে ২৫টি গাছের প্রায় সব লিচু প্রচণ্ড খরার কারণে ঝরে পড়েছে। বাকি যেগুলোয় এখনো কিছু লিচু আছে, সেগুলোয়ও খরা–রোদের তাপে কালো দাগ হয়ে লিচু পুড়ে যাচ্ছে।
অপর লিচুচাষি ছফির উদ্দিন বলেন, ‘বৃষ্টি থাকলে আমরা এখন লিচু ভাঙা শুরু করতে পারতাম। কিন্তু খরার কারণে লিচুচাষিদের মাথায় হাত। প্রতিবছর এ গ্রাম থেকে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হলেও এবার লিচুচাষিরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন।’
বিষয়টি নজরে আনা হলে পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুর-ই-আলম জানান, পাকুন্দিয়া মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে প্রায় পাঁচ হাজার লিচু গ্রাছ রয়েছে। দেশজুড়ে বেশ খ্যাতি রয়েছে এখানকার লিচুর। অন্যান্য বছর এ গ্রাম থেকে প্রায় ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার লিচু বেচাকেনা হতো। তবে এবার প্রচণ্ড গরমের কারণে অন্যান্য ফলফলাদির ন্যায় মঙ্গলবাড়িয়া লিচু গ্রামের লিচুচাষিরাও অনেকটা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
নুর–ই–আলম বলেন, ‘তবে মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই লিচুচাষিদের নিয়ে আমরা উঠান বৈঠকের আয়োজন করেছি লিচু চাষে করণীয় সম্পর্কে প্রচারপত্র বিতরণ করেছি। গাছে স্প্রে করার জন্য তিনটি ফুট স্পেয়ার দেওয়া হয়েছে। চারজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে লিচুবাগানের খোঁজখবর ও চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় লিচু ঝরে পড়ে।’