নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চর পাবর্তী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে নিজের মনোনীত চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী মোহাম্মদ গোলম শরীফের সমর্থনে কর্মী সভায় বক্তব্য দেন আবদুল কাদের মির্জা। বৃহস্পতিবার বিকেলে
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চর পাবর্তী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে নিজের মনোনীত চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী মোহাম্মদ গোলম শরীফের সমর্থনে কর্মী সভায় বক্তব্য দেন আবদুল কাদের মির্জা।  বৃহস্পতিবার বিকেলে

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ

তাঁর পছন্দের প্রার্থীদের ভোট না দিলে কেন্দ্রে যেতে মানা কাদের মির্জার

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা আবারও আলোচনায় এলেন। এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তাঁর পছন্দের তিন প্রার্থীকে ভোট না দিলে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করে হুমকি দিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি তাঁর সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ গোলাম শরীফ চৌধুরী ওরফে পিপুলের সমর্থনে চর পার্বতী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে আয়োজিত কর্মিসভায় এসব কথা বলেন। তাঁর বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

কাদের মির্জা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী সভা কিংবা কর্মিসভা করার সুযোগ নেই। এ ছাড়া প্রচারণাকালে ভোট না দিলে ভোটারদের কেন্দ্রে না যেতে বলাও বেআইনি। বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইসমাঈল আজ শুক্রবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তাঁর নজরে আসেনি। তিনি আজই এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে বলবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রার্থীর পক্ষে আনুষ্ঠানিক প্রচারণার কোনো সুযোগ নেই।

১ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, আবদুল কাদের মির্জা উপস্থিত ভোটারদের উদ্দেশ্য করে নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘আমার কথা সোজাসুজি। বাঁকা কথা আমি বলি না। পরে ভেজাল হয়ে যাবে। কী বলছি বুঝেছেন? এমনি ভালো আছেন। ভোটের পর (জাতীয় সংসদ নির্বাচন) বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়েছে? ...না। আপনারা শান্তিতে আছেন। ভোট যদি আমাদের তিনজনকে দেন, তাহলে কেন্দ্রে আসিয়েন। না হয় পরে ঝামেলা হলে আমি দায়িত্ব নিতে পারব না।’

আবদুল কাদের মির্জা আরও বলেন, শুধু শুধু কষ্ট করে কেন্দ্রে আসবেন না। বাড়িতে ঘুমাইয়েন। তাহলে পরে নিরাপদে বাকি পাঁচটা বছর থাকতে পারবেন।

নিজের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট না দিলে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার হুমকি দিয়ে বক্তব্য দেওয়ার বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও ফোন ধরেননি আবদুল কাদের মির্জা। তাই এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

আবদুল কাদের মির্জার এমন বক্তব্যে নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী মিজানুর রহমান ওরফে বাদল। তিনি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক। মিজানুর রহমান বলেন, এখন প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময়সীমাও শেষ হয়নি। এমন অবস্থায় কাদের মির্জা পরিবারের ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাঁর মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং তাঁর প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের নানা হুমকি দিচ্ছেন। তিনি (মিজানুর রহমান) এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করবেন।

প্রসঙ্গত, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২৯ মে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মোহাম্মদ গোলাম শরীফ চৌধুরী ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ওমর আলী। এর মধ্যে মোহাম্মদ গোলাম শরীফ চৌধুরী আবদুল কাদের মির্জার সমর্থিত প্রার্থী। তিনি গোলাম শরীফ ছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান পদে জসিম উদ্দিন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে পারভীন আক্তারকে সমর্থন দিচ্ছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তিনজনকে জেতানোর জন্য নিজেই প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ করছেন।