চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ। গতকাল তাঁকে অপসারন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ। গতকাল তাঁকে অপসারন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার

চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি ফজলুল্লাহকে অপসারণ, নতুন নিয়োগ পেলেন আনোয়ার পাশা

চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে এ কে এম ফজলুল্লাহকে অপসারণ করেছে সরকার। গতকাল বুধবার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ। এই পদে সাময়িকভাবে স্থানীয় সরকার চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
 
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৪-এর ধারা ২ ক এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ কে এম ফজলুল্লাহর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। নিয়োগের পৃথক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, অধ্যাদেশের ২৮ ক অনুযায়ী স্থানীয় সরকার, চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালককে তাঁর নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে সাময়িকভাবে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব প্রদান করা হলো। অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকালে তিনি বিধি মোতাবেক দায়িত্ব ভাতা পাবেন। দুটি প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেছেন উপসচিব মো. আবদুর রহমান।

১৯৪২ সালে জন্ম নেওয়া এ কে এম ফজলুল্লাহ চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে অবসর নেন ২০০০ সালে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ৬ জুলাই প্রথমবার চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে এক বছরের জন্য নিয়োগ পান। এরপর আরও এক বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালে ঢাকা ওয়াসার আদলে চট্টগ্রাম ওয়াসাতেও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ তৈরি করা হয়। ওয়াসা বোর্ডও পুনর্গঠন করা হয়। তখন এমডি পদে নিয়োগ পান তৎকালীন চেয়ারম্যান এ কে এম ফজলুল্লাহ। সেই থেকে এমডি পদে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি।

কর্মকর্তারা বলছেন, এ কে এম ফজলুল্লাহর সঙ্গে বিগত সরকারের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তাঁদের নানাভাবে কাজে লাগিয়ে তিনি বছরের পর বছর এই পদে ছিলেন। এ ছাড়া ওয়াসা বোর্ডও তাঁর নিয়ন্ত্রণ ছিল।

এ কে এম ফজলুল্লাহ ওয়াসার আলোচিত কর্মকর্তা। তাঁর আমলে পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা গড়ে তুলতে অন্তত ১০টি প্রকল্প নেওয়া হয়। আটটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। দুটি বড় প্রকল্পের কাজ এখনো চলছে। শেষ হওয়া আট প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। আর চলমান দুই প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৫ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। একের পর এক প্রকল্প নিলেও নগরে পানির সংকট কাটেনি। প্রকল্পের সুফল নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।

ওয়াসার সর্বোচ্চ পর্যায়ের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছিল। ২০২০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তাঁর নামে দুদক চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক বরাবর দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ করেছিলেন চট্টগ্রামের বাসিন্দা হাসান আলী। পরে ২৩ সেপ্টেম্বর অভিযোগের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তা জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। আদালতের ওই পদক্ষেপের পর ওয়াসা ভবনের একটি কক্ষে রহস্যজনকভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে কম্পিউটার, গুরুত্বপূর্ণ নথি পুড়ে যায়। এরপর অভিযোগ ওঠে, এমডির দুর্নীতি ঢাকতে ইচ্ছাকৃতভাবে ওই আগুন লাগানো হয়েছিল।

অবশ্য দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে এ কে এম ফজলুল্লাহ সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, তিনি অবৈধভাবে একটা টাকাও আয় করেননি। তাঁর বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত করেও কোনো অনিয়ম পায়নি। এ ছাড়া তাঁর আমলে পানির উৎপাদন ৫০ কোটি লিটারে পৌঁছেছে। এমনকি চট্টগ্রামের প্রথম পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পের কাজও তাঁর সময়ে শুরু হয়েছে।