যশোর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বিজিবি সদস্য মোহাম্মদ রইশুদ্দীনের লাশ বুধবার বিকেলে তাঁর গ্রামের বাড়ি পৌঁছেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) শ্যামপুর গ্রামে পরিবারের কাছে তাঁর লাশ হস্তান্তর করেন বিজিবি ৫৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল নাহিদ হোসেন।
নিহত রইশুদ্দীনের পরিবারের সদস্যরা বলেন, যশোর থেকে হেলিকপ্টারে করে লাশ শিবগঞ্জ স্টেডিয়ামে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে শ্যামপুরে নিয়ে আসা হয়। শ্যামপুরের ভবানীপুর কবরস্থানে জানাজা শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে তাঁকে দাফন করা হয়। এ সময় শ্যামপুরসহ আশপাশের গ্রামের কয়েক শ লোক লাশ দেখতে ভিড় জমান।
নিহত রইশুদ্দীন শ্যামপুরের কৃষক কামরুজ্জামানের ছেলে। রইশুদ্দীনের স্ত্রী নাসরিন খাতুন (২৫) বলেন, রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে মুঠোফোনে শেষবার কথা হয় তাঁর স্বামীর সঙ্গে। পরের দিন সকাল থেকে একাধিকবার ফোন দিয়ে পাননি। মঙ্গলবার সকালে গণমাধ্যমে খবর দেখে স্বামীর মৃত্যুর খবর জানতে পারেন।
নাসরিন খাতুন আরও বলেন, তাঁদের দুই বছর ও চার মাস বয়সী দুই মেয়ে রয়েছে। এখন মেয়েদের ভবিষ্যতে কী হবে? তিনি সরকারি সহায়তার দাবি জানান।
সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য শাহনাজ পারভিন বলেন, রইশুদ্দীন ও তাঁর স্ত্রী নাসরিন খাতুন গরিব পরিবারের সন্তান। পাশের গ্রাম ভবানীপুর বুড়াপাড়ায় বাবার বাড়িতে থাকেন নাসরিন। রইশুদ্দীন ছুটিতে বাড়ি এলে তখন শ্বশুরবাড়ি যান।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ওই দিন বিজিবি যশোর ব্যাটালিয়নের ধান্যখোলা বিওপির জেলেপাড়া পোস্ট–সংলগ্ন এলাকায় ভারত থেকে আসা একদল গরু চোরাকারবারিকে সীমান্ত অতিক্রম করে আসতে দেখে বিজিবির টহল দল। এ সময় টহল দলের সদস্যরা তাদের ধাওয়া দিলে তারা দৌড়ে ভারতের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বিজিবির টহল দলের সদস্য সিপাহি মোহাম্মদ রইশুদ্দীন চোরাকারবারিদের পেছনে ধাওয়া করতে করতে ঘন কুয়াশার কারণে দলছুট হয়ে পড়েন। প্রাথমিকভাবে তাঁকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও পরবর্তী সময় জানা যায়, তিনি বিএসএফের গুলিতে আহত হয়ে ভারতের ভেতরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ঘটনার পরপরই বিজিবি-বিএসএফের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ের পতাকা বৈঠক হয়। বৈঠক থেকে জানা যায়, ভারতের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই সৈনিকের মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়ে বিএসএফকে সুষ্ঠু তদন্ত করার দাবি জানানোর পাশাপাশি কূটনৈতিকভাবে তীব্র প্রতিবাদলিপি পাঠানো হয়েছে।