আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলাম সমর্থন দিয়েছেন—এমন বক্তব্য দেওয়ায় টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনের কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সমালোচনা করে বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রার্থী আবুল হাশেম ওরফে দুর্জয় তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে কাদের সিদ্দিকীর সমালোচনা করেন আবুল হাশেম। তিনি ২৩ মিনিট ১৩ সেকেন্ড লাইভে ছিলেন।
কাদের সিদ্দিকীর উদ্দেশে আবুল হাশেম বলেন, ‘আপনি বলেছেন জোয়াহের (বর্তমান সংসদ সদস্য) আপনাকে সমর্থন দিয়েছেন। এ জন্য আপনি জোয়াহেরকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমি আপনার দলের কর্মী ছিলাম। আপনার মেয়ে কুঁড়ি সিদ্দিকীর নির্বাচন করতে গিয়ে জোয়াহের আমাদের নামে অনেকগুলো মিথ্যা মামলা করেছিল। সেই মামলায় আমরা জেল খেটেছি। পাঁচ বছর ধরে হাজার হাজার টাকা খরচ করে মামলা চালাচ্ছি। এখনো মামলা চলমান। এই নির্বাচনের সেই জোয়াহেরের সমর্থন নিয়ে আপনি আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। জোয়াহের একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। এ কারণে তিনি এবার মনোনয়ন পাননি। জোয়াহের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার পরও গত পাঁচ বছরে তাঁর সম্পর্কে আপনি একটি কথাও বলেননি।’
লাইভে কান্না করতে করতে আবুল হাশেম বলেন, ‘২৭ বছর কাদের সিদ্দিকীকে ভালোবেসেছিলাম। আমার ছেলে ক্যানসারে আক্রান্ত ছিল। বঙ্গবীর আমার ছেলের জন্য একটি টাকাও সাহায্য করেনি। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে চেনেন না। তারপরও তিনি আমার ছেলের জন্য সহযোগিতা করেছেন। সবার সহযোগিতায় আমার ছেলে এখন সুস্থ। গত ২৭ বছরে কাদের সিদ্দিকীর পেছনে কমপক্ষে আমি ১০ লাখ টাকা ব্যয় করেছি। অথচ কাদের সিদ্দিকী কখনো আমাকে রুটি খাওয়ার জন্য ১০ টাকাও দেয়নি।’
কাদের সিদ্দিকীর কর্মীদের উদ্দেশে বিকল্পধারার এই প্রার্থী আরও বলেন, ‘আমি ছিলাম সেরা কর্মী। কাদের সিদ্দিকীর কাছ থেকে আমিই প্রতারিত হয়েছি। আপনারাও একদিন প্রতারিত হবেন। একদিন আপনারাও বলবেন আবুল হাশেম সঠিক কথাই বলেছিল। অতএব তাকে বাদ দিয়ে আমাকেই ভোট দিন। আমি আপনাদের সেবা করব।’
এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অনুপম শাহজাহান জয়ের উদ্দেশে আবুল হাশেম বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলামকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে প্রমাণ করার জন্য সংগ্রাম করেছি। এ কারণে শেখ হাসিনা জোয়াহেরুলকে মনোনয়ন না দিয়ে আমার আন্দোলনের ফসল হিসেবে আপনাকে মনোনয়ন দিয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে অনুপম শাহজাহান জয় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবুল হাশেমের লাইভ আমি দেখেছি। কাদের সিদ্দিকী সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন, তা সত্য। তিনি তাঁর নিবেদিত কর্মীদের সঙ্গেই বেইমানি করেছেন। তিনি (কাদের সিদ্দিকী) সখীপুর-বাসাইলবাসীর সঙ্গে শুধু নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সঙ্গেও বেইমানি করেছেন। এবার ভোটের মাধ্যমে এ বহিরাগতকে সখীপুর থেকে তাড়িয়ে কালিহাতিতে পাঠানো হবে।’
আবুল হাশেম আজ বেলা ১১টায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের একটি সংসদ সদস্য জোয়াহেরুলের নেতৃত্বে কাদের সিদ্দিকীকে সমর্থন দিয়েছেন। সখীপুরে ৪০ শতাংশ লোক আওয়ামী লীগ করে। এই ৪০ শতাংশ কাদের সিদ্দিকী ও অনুপমের সঙ্গে আছে। আর বাকি ৬০ শতাংশ জনসমর্থন আমার সঙ্গে রয়েছে। অতএব এবার সুষ্ঠু ভোট হলে আমার বিজয় নিশ্চিত।’
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে উপজেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারন সম্পাদক সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘লাইভে এসে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী সম্পর্কে আবুল হাশেম যা বলেছেন, তা ডাহা মিথ্যা। তিনি একসময় আমাদের কর্মী ছিলেন। ক্যানসারে আক্রান্ত তাঁর ছেলের জন্য বঙ্গবীর যথাসাধ্য সহযোগিতা করেছেন। আবুল হাশেম দুই উপজেলা মিলে ১০০ ভোটও পাবে কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। অতএব তাঁর কথার তেমন কোনো গুরুত্ব জাতির কাছে নেই।’
এ আসনে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয় পার্টির রেজাউল করিম (লাঙ্গল), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোস্তফা কামাল বাদল (ডাব) ও তৃণমূল বিএনপির পারুল (সোনালী আঁশ)।