বাণীশান্তার উর্বর কৃষিজমি বালু ফেলে ধ্বংস করা যাবে না: সুলতানা কামাল

বাণীশান্তা বাজারে কৃষিজমি রক্ষার দাবিতে জনসভায় বক্তব্য রাখছেন সুলতানা কামাল
ছবি: প্রথম আলো

খুলনার দাকোপ উপজেলার সুন্দরবনের কূলঘেঁষা বাণীশান্তা ইউনিয়নের ৩০০ একর কৃষিজমি রক্ষার দাবিতে জনসভা করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাণীশান্তা ইউনিয়ন কৃষিজমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি।

আজ সোমবার বিকেলে বাণীশান্তা বাজারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। জনসভা থেকে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষকে উপকূলের জীবন-জীবিকা ধ্বংস করে কৃষিজমিতে বালু ফেলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানানো হয়।

জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বাপা সভাপতি মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ‘ফসলি জমি নষ্ট করলে একসময় অনাহারে মরতে হবে। ফসলি জমির তো কোনো দাম হয় না। তারা এটার ক্ষতিপূরণ দেবে বলছে। কিন্তু কী ক্ষতিপূরণ দেবে? এ দাম তো নির্ধারণ করা যায় না। এখানে (বাণীশান্তা) বালু ফেললে আশপাশের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে ওই এলাকা। এটা কোনো নীতির সঙ্গেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যারা এই নীতি গ্রহণ করেছে, আমি বলব তারাই কুচক্রী, তারাই ষড়যন্ত্রকারী। তারা বাংলাদেশের ভালো চায় না। মানুষের ভালো চায় না।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, বাণীশান্তার ৩০০ একর উর্বর কৃষিজমিতে মোংলা বন্দরের পশুর নদের ড্রেজিংয়ের বালু ফেলে ধ্বংস করা যাবে না। কৃষিজমি ধ্বংস করে কোনো উন্নয়ন করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর এই অনুশাসন মোংলা বন্দরকেও মেনে চলতে হবে। বিকল্প জায়গা থাকার পরও কৃষিজমিতে বালু ফেলার গোঁয়ার্তুমি থেকে মোংলা বন্দরকে সরে আসতে হবে।

সুলতানা কামাল আরও বলেন, ‘আমরা উন্নয়নের বিপক্ষে না। উন্নয়ন হতে হবে। ড্রেজিং হতে হবে। আবার কৃষককেও বাঁচাতে হবে। এমন না যে বালু ফেলার জায়গা নেই। যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁরা বালু ফেলার জায়গাও দেখিয়ে দিয়েছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। জনগণের কথা শুনে সিদ্ধান্ত বদলের আহ্বান জানাই। তাঁদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।’ জনসভার আগে তিনি বাণীশান্তা-ভোজনখালি বিলের আমন ধানের খেত পরিদর্শন করেন।

জনসভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বাপার কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ আন্দোলনকারীদের নানা ধরনের ভয়ভীতি, হামলা-মামলা ও নির্যাতনের হুমকি দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুশাসন উপেক্ষা করে বন্দর কর্তৃপক্ষ যদি কৃষিজমি রক্ষা আন্দোলনকারীদের ওপর কোনো ধরনের হামলা-মামলা চালায়, সারা দেশ তার বিরুদ্ধে গর্জে উঠবে।

বাণীশান্তা কৃষিজমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির নেতা হিরন্ময় রায়ের সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যদের মধ্যে বাপার কেন্দ্রীয় নেতা মো. নূর আলম শেখ, আবদুল করিম, তোফাজ্জেল সোহেল, বাণীশান্তা কৃষিজমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির নেতা সঞ্জীব মণ্ডল, বিশ্বজিৎ মণ্ডল, সত্যজিৎ গাইন, ইসরাফিল বয়াতি, কৃষ্ণপদ মণ্ডল, ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা গৌরাঙ্গ প্রসাদ রায় প্রমুখ বক্তব্য দেন।

জনসভায় বক্তারা বলেন, দাকোপ উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ কৃষিজমি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ। তাঁরা জীবন দিয়ে হলেও মোংলা বন্দরকে কৃষিজমিতে বালু ফেলতে দেবে না।

স্থানীয় সূত্র জানায়, খুলনার দাকোপ উপজেলার পশুর নদের পারের বাণীশান্তা ইউনিয়নের মানুষের আয়ের একমাত্র উৎস কৃষি। তবে মোংলা বন্দর চ্যানেলের গভীরতা বাড়ানোর জন্য পশুর নদ খনন করে বালু ফেলতে তাঁদের সেই আবাদি জমি হুকুমদখল করা হয়েছে। এতে জীবিকা হারানোর আশঙ্কায় তাঁরা তাঁদের এ জমিতে বালু ফেলতে দিতে রাজি নন। জমিতে পশুর নদের বালু ফেললে কমপক্ষে ১ হাজার ২০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত ও বাস্তুচ্যুত হবে বলে দাবি কৃষকদের। তাই বিকল্প জায়গায় বালু ফেলার প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা।