নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুন মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেনকে অস্ত্র ও মাদকসংক্রান্ত এক মামলায় আদালতে উপস্থিত না করার বিষয়টি আদালতকে অবগত না করায় গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারের পার্ট-২ জেল সুপারকে কারণ দর্শাতে বলেছেন বিচারক। সেই সঙ্গে ৪ আগস্ট পরবর্তী তারিখ ধার্য করে জেল সুপারকে সশরীর আদালতে হাজির হয়ে এর ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (প্রথম) সাবিনা ইয়াসমিন এই আদেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) সালাহ্ উদ্দিন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, আজ বৃহস্পতিবার নূর হোসেনের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলায় রায় ঘোষণার দিন ধার্য ছিল। সেই সঙ্গে মাদক মামলায় নূর হোসেনসহ তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। সে হিসাবে আদালতে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ চারজন পুলিশ কর্মকর্তা সাক্ষী দেওয়ার জন্য উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু নূর হোসেনকে আদালতে উপস্থিত না করায় মামলার কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়নি। সাক্ষীদের সাক্ষ্য না দিয়েই ফেরত চলে যেতে হয়েছে।
সালাহ্ উদ্দিন আরও বলেন, পরে মুঠোফোনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নূর হোসেনকে দুদকের মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে হাজির করা হয়েছিল। এ কারণে তাঁকে নারায়ণগঞ্জের আদালতে হাজির করা হয়নি। কিন্তু এ বিষয়টি আদালতকে অবহিত করেননি জেল সুপার। আদালতকে কেন অবগত করা হলো না, আদালত ক্ষুব্ধ হয়ে কাশিমপুর করাগারের জেল সুপারকে শোকজ করেছেন এবং আগামী ৮ আগস্ট সশরীর উপস্থিত হয়ে এর ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন। আদালত বলেছেন, এটা কী ধরনের আচরণ। এর দায়ভার নিতে হবে। সেই সঙ্গে জেল সুপারের বিরুদ্ধে অর্ডার শিট আইন মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন বিচারক।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, সহকারী পুলিশ সুপার মো. আলাউদ্দিন, কনস্টেবল বাবর আলী, নিখিল সাহা ও আনিসুর রহমানের সাক্ষ্যের জন্য তারিখ ধার্য ছিল। তাঁরা আদালতে মাদক মামলায় সাক্ষী দেওয়ার জন্য উপস্থিতও ছিলেন।
এ বিষয়ে নূর হোসেনের আইনজীবী খোকন সাহা প্রথম আলোকে জানান, নূর হোসেনকে আদালতে হাজির না করায় আদালত ক্ষুব্ধ হয়ে কাশিমপুর কারাগারের জেল সুপারকে কারণ দর্শাতে বলেছেন। তাঁকে হাজির না করার বিষয়টি আদালতকে না জানানোয় তাঁর কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন। আদালত বলেছেন, দূরদূরান্ত থেকে সাক্ষীরা সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতে এসেছিলেন। কিন্তু নূর হোসেনকে না আনায় আদালত জেল সুপারকে ভর্ৎসনাও করেছেন বলে জানান আইনজীবী।
নূর হোসেনের বিরুদ্ধে মামলায় চারজন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদানের জন্য আদালতে হাজির ছিলেন বলে জানান নারায়ণগঞ্জ আদালতের পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, নূর হোসেনকে না আনায় কোনো সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি।
এ বিষয়ে কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২–এর জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক আমিরুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, একই দিন নূর হোসেনের ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে দুটি আদালতে মামলার তারিখ ধার্য ছিল। ঢাকার আদালতে নূর হোসেনকে হাজির করায় তাঁকে নারায়ণগঞ্জের আদালতে হাজির করা যায়নি।