লালমনিরহাটে বিএনপি ও যুবদলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারি দরপত্র জমাদানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আজ বুধবার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দরপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল।
সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দরপত্র দাখিলের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া ছিল। সকাল থেকেই বেশ কিছু ব্যবসায়ী দরপত্র জমা দিতে এসে বাধার শিকার হন বলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে অভিযোগ করেন। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে যুবদলের এক নেতাকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন। ঘটনাটি নিয়ে শহরে আলোচনা তৈরি হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের পুরোনো বহুতল ভবনের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত তত্ত্বাবধায়কের (উপপরিচালক সমমান) কার্যালয়ের করিডরে সকাল ৯টা বাজার আগে থেকেই বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এ সময় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতির কারণে দরপত্র দাখিল করতে আসা অন্যরা বাধাগ্রস্ত হন। বিষয়টি সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক কার্যালয়ের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীর সদস্য ও পুলিশকে তৎক্ষণাৎ মুঠোফোনে জানানো হয়। এরপর সেনাবাহিনীর সদস্যরা গাড়ি নিয়ে সদর হাসপাতালের চত্বরে ঢোকার সময় অনেকে হাসপাতালের দেয়াল টপকে পালিয়ে যান। দেয়াল টপকে পালানোর সময় পড়ে গিয়ে কয়েকজন হাতে–পায়ে আঘাত পেয়েছেন। সেনাবাহিনীর সদস্যরা হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে লালমনিরহাট পৌর যুবদলের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ওরফে জুলহাসসহ (৪০) কয়েকজনকে আটক করেন। পরে জাহাঙ্গীর আলমকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা লালমনিরহাট সদর থানা-পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।
সেনাবাহিনীর সদস্যরা হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে লালমনিরহাট পৌর যুবদলের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ওরফে জুলহাসসহ (৪০) কয়েকজনকে আটক করেন।
ঘটনাটি নিশ্চিত করে লালমনিরহাট ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. আবদুল মোকাদ্দেম আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালের দরপত্র জমাদানে বাধার সৃষ্টি হলে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহায়তা চাওয়া হয়। এরপর সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা এসে হাসপাতালের সিসিটিভির ফুটেজ দেখে কয়েকজনকে আটক করেন। তাঁদের মধ্যে একজনকে পুলিশে দেওয়া হয়। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত দরপত্র জমাদানের কাজ সুসম্পন্ন হওয়ায় থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। শুনেছি মুচলেকা নিয়ে আটক ওই ব্যক্তিকে পুলিশ থানা থেকে ছেড়ে দিয়েছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লালমনিরহাট জেলা যুবদলের সভাপতি আনিসুর রহমান বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আটক জুলহাসের (জাহাঙ্গীর) বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো রকম সত্যতা না পাওয়ায় সদর থানার পুলিশ তাঁকে মুচলেকায় মুক্তি দিয়েছে।’ আনিসুর রহমান আর কিছু বলতে রাজি হননি।
লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাতে আটক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে কেউ লিখিত অভিযোগ না করায় তাঁকে আজ বিকেলে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে সার্বিক ঘটনা উল্লেখ করে পুলিশের পক্ষ থেকে লালমনিরহাট সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। ওসিও এর বেশি আর কিছু বলতে রাজি হননি।
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক কার্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, পথ্যসামগ্রীসহ তিনটি প্যাকেজের দরপত্রের বিপরীতে সর্বমোট ২৪টি দরপত্র দাখিল করা হয়েছে। আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় দরপত্র উন্মুক্ত করা হয়।
এদিকে দরপত্র দাখিলের জন্য আজ সদর হাসপাতাল এলাকায় উপস্থিত হওয়া একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঠিক সময়ে উপস্থিত হয়ে পদক্ষেপ না নিলে এতগুলো দরপত্র দাখিল করা সম্ভব হতো না।