পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে কুমিল্লার বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে মানুষের ঢল নেমেছে। কোটবাড়ী এলাকায় অবস্থিত ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন শালবন বিহারে ঈদের দিন থেকেই দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। স্বাভাবিক সময়ে দর্শনার্থীর সংখ্যা ৫০০ থেকে ২ হাজারের মতো থাকলেও ঈদের ছুটিতে এই সংখ্যা ৮ থেকে ১২ হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
একই অবস্থা ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বিনোদনকেন্দ্রগুলোতেও। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে ঘুরে শালবন বিহারের পাশাপাশি কুমিল্লায় ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত সবচেয়ে বড় বিনোদনকেন্দ্র ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্কেও দর্শনার্থীদের ঢল দেখা গেছে। কুমিল্লা নগরের নগর উদ্যান পার্ক বিনা খরচে ঘুরে দেখছেন দর্শনার্থীরা। ঈদের দিন থেকে সেখানে যে পা ফেলার জায়গাও নেই মানুষের ভিড়ে।
কুমিল্লার পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মতে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারের ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছে বিনোদনকেন্দ্রগুলো। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ভিড় করছেন।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দর্শনার্থীদের কোলাহলে মুখর হয়ে উঠেছে শালবন বিহার এলাকা। দর্শনার্থীদের কেউ ঐতিহাসিক এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ঘুরে দেখছেন, আবার কেউ ছবি তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার অনেক সমবয়সীরা একত্র হয়ে আড্ডায় মেতে উঠছেন। পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সঙ্গে নিয়ে ঈদের আনন্দের জোয়ারে ভাসতে দেখা গেছে সবাইকে।
ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে শালবন বিহারে ঘুরতে আসা মাহাবুব আলম প্রথম আলোকে বলেন, এখানে ঘুরতে এসে বেশ ভালো লাগছে। অনেক মানুষ এসেছেন। রোজার ঈদের সময় ছাড়া এত মানুষ শালবন বিহারে ঘুরতে আসেন না। শারমিন আক্তার নামের আরেক দর্শনার্থী বলেন, ‘শালবন বিহার আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। এখানে ঘুরতে আমাদের খুবই ভালো লাগে।’
ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো. শাহীন আলম প্রথম আলোকে বলেন, এবারের ঈদের ছুটিতে আবহাওয়া ভালো থাকায় দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লেগে রয়েছে। ঈদের দিন দর্শনার্থীদের সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানেও দর্শনার্থীর উপস্থিতি ভালো। প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ হাজার মানুষ আসছেন শালবন বিহারে। দর্শনার্থীদের বাড়তি চাপ সামাল দিতে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। ঈদের দিন থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শুধু শালবন বিহার ঘুরে দেখতে পারছেন দর্শনার্থীরা। শুক্রবার (৪ এপ্রিল) থেকে ময়নামতি জাদুঘরও খোলা থাকবে।
ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘরে সারা বছরই দর্শনার্থীরা ঘুরতে আসেন। বর্তমানে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য টিকিট ৩০ টাকা। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ টাকা। আর পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিশুরা বিনা টিকিটে প্রবেশ করার সুযোগ পাচ্ছেন। এ ছাড়া সার্কভুক্ত দেশের বিদেশি পর্যটকদের জন্য ২০০ টাকা এবং অন্যান্য দেশের পর্যটকদের জন্য টিকিট ৪০০ টাকা। শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর ঘুরে দেখার জন্য একই পরিমাণ টাকায় আলাদাভাবে টিকিট কাটতে হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে কোটবাড়ী এলাকায় প্রতিষ্ঠিত ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্কে প্রবেশ করতেই দর্শনার্থীদের বেশ ভিড় চোখে পড়ল। পার্কের ভেতরের ওয়াটার পার্কে গানের তালে তালে আনন্দে মেতে উঠেছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
পার্কটিতে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী সুমাইয়া আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই পার্কে ওয়াটার পার্কের পাশাপাশি বাচ্চাদের জন্যও অনেক রাইড আছে। আমি সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে এসেছি। অনেক মানুষ দেখে ভালো লাগছে।’
পার্কের পরিচালক মোদাব্বির হোসেন ওরফে নাসির প্রথম আলোকে বলেন, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে তিন থেকে চার গুণ বেশি মানুষ এখানে ঘুরতে আসছেন। পার্কের প্রবেশমূল্য ৩০০ এবং ভেতরে ওয়াটার পার্কে প্রবেশমূল্য ৪০০ টাকা। তাঁরা চেষ্টা করছেন বাড়তি চাপ সামলে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য।