নাটোরে মারকাজ মসজিদের দখল নিয়ে তাবলিগ জামাতের মাওলানা সাদ ও জুবায়ের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে শহরের মল্লিকহাটি এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৩২ জন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাসদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
পুলিশ ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মল্লিকহাটি এলাকায় নাটোর-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে ২০১২ সালে তাবলিগ জামাতের জেলা মারকাজ মসজিদ নির্মিত হয়। মসজিদ নির্মাণের কিছুদিন পর তাবলিগ জামাতের মধ্যে মাওলানা সাদ ও মাওলানা জুবায়ের সমর্থকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়। এরপর মসজিদটি নিয়ন্ত্রণে নেন মাওলানা সাদ সমর্থকেরা। প্রতিবছর এখানে বার্ষিক ইজতেমারও আয়োজন করা হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৭ আগস্ট মাওলানা জুবায়ের সমর্থকেরা সাদ সমর্থকদের বের করে দিয়ে মসজিদটি দখলে নেন। তখন থেকে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। কয়েক দিন আগে বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর নির্দেশে বিএনপি নেতারা শহরের একটি মাদ্রাসায় উভয় পক্ষকে নিয়ে সভা করেন। সভায় জুবায়ের সমর্থকেরা মসজিদের জমি কেনা বাবদ ১২ লাখ টাকা ও ক্ষতিপূরণ বাবদ ৬ লাখ টাকা সাদ সমর্থকদের দিয়ে মীমাংসা করে নেবে—এই মর্মে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে কেউ কারও জামাতে বাধা দেবে না, হামলা করবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ওই সভার পরের দিন সিংড়াতে সাদ সমর্থক একটি জামাতের সাথিদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। আবার শর্ত মোতাবেক ১৮ লাখ টাকা পরিশোধ করাও হয় না। এ অবস্থায় উভয় পক্ষের মধ্যে আবারও উত্তেজনা দেখা দেয়।
আজ দুপুর ১২টার দিকে সাদ সমর্থক শতাধিক সাথি হঠাৎ মারকাজ মসজিদে ঢুকে পড়েন। এ সময় জুবায়ের সমর্থকেরা তাঁদের প্রতিহত করেন এবং লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করেন। পরে আশপাশের মহল্লা থেকে হাজার হাজার লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে অন্তত ১০ জনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাসদস্যরা সেখানে ছুটে যান। তাঁরা উভয় পক্ষকে মসজিদ চত্বর থেকে সরিয়ে দেন এবং মসজিদের ফটকে তালা দিয়ে দেন।
ঘটনার সময় নাটোর-রাজশাহী বাইপাস সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে মসজিদের উভয় পাশে যানজট সৃষ্টি হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা পর পুলিশ ও সেনাসদস্যদের চেষ্টায় সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
সংঘর্ষে সাদ সমর্থকদের মধ্যে আহত হয়েছেন মাওলানা লুৎফর রহমান, মুফতি ইদ্রিস আলী, শাহজাহান আলী সর্দার, ফিরোজ মোল্লা, নাঈম সর্দার, খলিলুর রহমান, শাহীন সর্দার, মো. মোয়াজ, কাউছার আলী, উজ্জ্বল কাউছার, ইউসুফ আলী ও জাহাঙ্গীর সর্দারসহ মোট ২৪ জন। অন্যদিকে জুবায়ের সমর্থক সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল ব্যাপারী, মাহবুব হোসেন, হাসান আলী, আব্দুল মজিদ, আব্দুল লতিফ ও ইস্রাফিল হোসেনসহ মোট আটজন আহত হন।
সাদ সমর্থক কাউছার আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুরু থেকে আমরাই মসজিদটি নির্মাণ করে তাবলিগের কার্যক্রম চালিয়ে আসছি। আমাদের উদ্যোগে প্রতিবছর ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর হঠাৎ জুবায়ের সমর্থকেরা আমাদের বের করে দিয়ে মসজিদটির দখল নিয়ে নেন। সেখানে আমাদের যেতে দেন না। যথারীতি ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত মসজিদ চত্বরে ইজতেমা অনুষ্ঠানের ডাক দেওয়া হয়। ইজতেমার প্রস্তুতি হিসেবে আজ আমরা সেখানে গেলে প্রতিপক্ষরা আমাদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান। আমাদের অন্তত ২৪ জন আহত হয়েছেন।
তবে জুবায়ের সমর্থক আবুল ব্যাপারী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার বাপ–দাদারা এই মসজিদে জমি দান করেছেন। কিন্তু সাদ সমর্থকেরা মসজিদে বিতর্কিত কার্যকলাপ চালান। এ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি সালিস করে মীমাংসা করা হয়। মীমাংসার শর্ত না মেনে তাঁরা আজ অতর্কিত মসজিদের দখল নিতে এলে গোলামাল হয়েছে। আমি নিজেও মার খেয়েছি।’
নাটোর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম জানান, মসজিদের দখল নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যকার বিরোধ থেকে সংঘর্ষ বাধে। তবে বিকেল নাগাদ পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে। মসজিদ থেকে উভয় পক্ষকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মসজিদের পাশের সড়কে যানবাহন চলাচলও স্বাভাবিক হয়েছে। কোনো পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।