বিয়ের ৯ বছর অপেক্ষার পর গত বুধবার একসঙ্গে চার সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তহমিনা খাতুন। চারজনেরই ওজন কম থাকায় সংকটাপন্ন অবস্থায় তাদের শিশু নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউতে) নেওয়া হয়। আর তহমিনা আছেন প্রসূতি ওয়ার্ডে। জন্মের পাঁচ দিন পরও সন্তানদের এখন পর্যন্ত কাছে না পেয়ে ছটফট করছেন তিনি।
তহমিনা বলেন, ‘অ্যাকন মনে হচ্চে সন্তানের মা হওয়ার অপেক্ষার চাইতি তাদের কাচে পাওয়া বেশি কঠিন। পাঁচ দিন পরেও চার বাচ্চার একজন কেউ ছুঁতি পারিনি। চোকির দেকাও দেকতি পারিনি। বুকে জড়ি ধরতি পারিনি। দুদ খাওয়াতি পারিনি জান-মানিকদের।’
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার সুটিয়া গ্রামের জিয়ারুল ইসলামের স্ত্রী তহমিনা। বিয়ের ৯ বছর অপেক্ষার পর একসঙ্গে চার সন্তানের জন্ম দেন। গত বুধবার বিকেলে যশোরের আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক এবং প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান শিলা পোদ্দারের তত্ত্বাবধানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তিনি দুই ছেলে ও দুই মেয়েসন্তান প্রসব করেন।
রোববার দুপুর ১২টায় এ খবর লেখার সময় নবজাতকেরা হাসপাতালের তিনতলায় এনআইসিইউতে এবং তহমিনা চারতলায় প্রসূতি বিভাগে ভর্তি ছিলেন। চিকিৎসক শিলা পোদ্দার মুঠোফোনে জানান, তহমিনা ভালো আছেন।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ কিশোর কুমার বিশ্বাস শিশুদের অবস্থা নিয়ে বাবা জিয়ারুলকে জানিয়েছেন, চার সন্তানের মধ্যে একটি মেয়ের অবস্থা কিছুটা অবনতির দিকে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে কিশোর কুমারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনি প্রতিবারই কেটে দেন। খুদে বার্তা পাঠানোর পরও কোনো সাড়া দেননি।
তহমিনা বলেন, বিয়ের পর আট বছর কোনো সন্তান না হওয়ায় ঘরে-বাইরে অনেক কটুকথা শুনতে হয়েছে তাঁকে। কষ্টের কথা কাউকে বলতে পারেননি। তবে স্বামী জিয়ারুল ইসলাম সব সময় তাঁর পাশে ছিলেন।
তহমিনা বলেন, ‘যকন বুঝতি পারলাম আমার ভেতরে সন্তানেরা দিন দিন বাইড়ে উঠচে, পোথম পোথম বিশ্বাস হতি চাইত না। বুধবার সিজারের পর আমার সন্তানেরা যকন দুনিয়ার মুখ দেখল, উদের কান্না শুনে খুপ আনন্দ লাগছিল। এক সুমায় নার্সরা দুটি ছেলে ও দুটি মেয়ে হওয়ার কথা বলে। সেই থেইকে সন্তানরা ও আমি আলাদা তলায়। তাদের ছুঁয়ে দেখার তর আর সইচে না।’
হাসপাতাল সূত্র জানায়, শিশুদের বুকের দুধ ছাড়া আপাতত আর কিছুই খাওয়ানো যাবে না। কিন্তু মা তহমিনার কাছ থেকে চাহিদা অনুযায়ী দুধ মিলছে না। হাসপাতালে ভর্তি অন্য প্রসূতি মায়েদের কাছে অনুরোধ করে শিশুদের বুকের দুধ নিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে।
শিশুদের বাবা জিয়ারুল ইসলাম বলেন, বুধবার থেকে রোববার পর্যন্ত খরচের পরিমাণ এক লাখ টাকা ছুঁই ছুঁই। চিকিৎসকেরা তাঁকে বলেছেন, তাঁদের আরও এক সপ্তাহ হাসপাতালে থাকতে হবে। এ জন্য আরও এক লাখ টাকার প্রয়োজন। সব মিলিয়ে দুই লাখ টাকার খরচ জোগাড় করতে হিমশিম অবস্থা। কোথা থেকে কীভাবে এই টাকা মিলবে, তা নিয়ে চরম উদ্বেগে রয়েছেন।
তবে প্রথম আলোতে সংবাদ প্রকাশের পর জিয়ারুল ইসলামকে প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার টাকা সহায়তা দেন জেলা প্রশাসক কিসিঞ্জার চাকমা। পরবর্তী সময়ে জেলা প্রশাসক আরও সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।