‘দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে, সেই নির্বাচনে জনগণ তাদের প্রতিনিধি ঠিক করবে। এখানে কোনো দ্বিমত পোষণ করলে হবে না। বিএনপি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে না, বিএনপি রাজনীতি করে জনগণের জন্য। আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে দেশের সব প্রতিষ্ঠান নষ্ট করে দিয়েছে। সব প্রতিষ্ঠান সংস্কার করে নির্বাচনে যাব—এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। আমাদের সংস্কার প্রয়োজন আছে; কিন্তু সংস্কার চলমানপ্রক্রিয়া, সংস্কার এমন কোনো জিনিস নয় যে আজকে সংস্কার করে তা তালাবদ্ধ করে রাখব। তারপর আগামী ১০, ২০, ৫০ বছরেও আর সংস্কার করব না।’
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কী কী সংস্কার করা প্রয়োজন তা চিহ্নিত করতে হবে। সেগুলো সংস্কার করে নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে—এটিই দেশের ১৮ কোটি মানুষের প্রত্যাশা। শনিবার সন্ধ্যায় নগরের শহীদ হাদিস পার্কে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে খুলনা মহানগরের বিএনপি আয়োজিত তিন দিনের কর্মসূচির শেষ দিনে ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবসের তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান এসব কথা বলেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ যখন পাকিস্তানের হায়েনারা এদেশের নিরীহ মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তখন আওয়ামী লীগ কোথায় ছিল প্রশ্ন রেখে স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কোনো ভূমিকা রাখেনি। মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান বীর উত্তম প্রথমে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। ১৯৭১ সালের আওয়ামী লীগ কাপুরুষের মতো দেশের জনগণকে বিপদে ফেলে পালিয়ে গিয়েছিল, ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার বিপ্লবের মুখে আবারও সেই একইভাবে পালিয়েছে। বাংলাদেশকে কারা রক্ষা করেছে সেই সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। আওয়ামী লীগ কখনোই দেশের স্বার্থ রক্ষা করেনি।
জিয়াউর রহমান ’৭১ সালে প্রথম পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন, তিনি মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। আবার তিনি সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করেছেন। এসবের জন্য তিনি বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত হন। স্বাধীনতার পরে আওয়ামী লীগ রক্ষীবাহিনী তৈরি করে ৩০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছিল। ১৯৭২-৭৫ পর্যন্ত তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিল। দেশের মানুষ ৭ নভেম্বর আবারও জিয়াউর রহমানকে ক্ষমতায় এনে সেই বাকশালের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাকশালী জমিদারি প্রথা বিতাড়িত করেন। ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতা বুকের রক্ত দিয়েছেন নির্বাসিত গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য।
ছাত্রদের লেখাপড়া করার আহ্বান জানিয়ে এই নেতা বলেন, ‘দেশের ১ নম্বর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। ইতিহাস জানতে পড়াশোনা করতে হবে।’
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেন, দেশ স্বাধীনের পরে দেশে গণতন্ত্র ছিল না। যে গণতন্ত্রের জন্য মানুষ যুদ্ধ করেছিলেন, সেই গণতন্ত্র হত্যা করে আওয়ামী লীগ বাকশাল কায়েম করেছিল। ৭ নভেম্বর অভূতপূর্ব বিপ্লবের মাধ্যমে একদলীয় শাসনব্যবস্থা ভেঙে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন এদেশের সিপাহি-জনতা। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষদের পরিচয় দিয়েছিলেন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের।
৭ নভেম্বর ও ৫ আগস্ট একই সূত্রে গাথা উল্লেখ করে এই নেতা আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা মানে ছাত্র-জনতার ব্যর্থতা। তাই বর্তমান সরকারকে সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ডায়লগ করার আহ্বান জানান। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দীর্ঘসূত্রতাকে এদেশের মানুষ ভালোভাবে নেবে না।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলমের সভাপতিত্বে ও মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব শফিকুল আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, সাবেক সংসদ সদস্য শেখ মুজিবর রহমান, কেন্দ্রীয় সদস্য খান রবিউল ইসলাম, আক্তার জাহান, সাংবাদিক রাশিদুল ইসলাম প্রমুখ। পরে সভাস্থলে মহানগর বিএনপির উদ্যোগে প্রকাশিত বিশেষ ক্রোড়পত্র ‘প্রথম বাংলাদেশ’–এর মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধান অতিথি। সন্ধ্যায় জাসাসের উদ্যোগে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।