সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি নাবিক আইনুল হকের মা লুৎফে আরা বেগম
সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি নাবিক আইনুল হকের মা লুৎফে আরা বেগম

বহির্নোঙরে এমভি আবদুল্লাহ

ছেলেকে কখন বুকে জড়িয়ে নেবেন, সেই অপেক্ষায় মা

সোমালিয়ার দস্যুদের হাতে জিম্মি থাকা অবস্থায় ছেলে আইনুল হকের চিন্তায় ঘুম আসত না মা লুৎফে আরা বেগমের। দস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার এক মাস পর কাল মঙ্গলবার সন্তানের সঙ্গে দেখা হবে মায়ের।

লুৎফে আরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছেলেকে কখন বুকে জড়িয়ে নেব, সেই অপেক্ষায় আছি। তাকে ফিরে পাচ্ছি; এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া। ছেলের প্রিয় খাবার শুঁটকিভর্তা, চিংড়ি মাছ রান্না করব।’

জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত হওয়ার প্রায় এক মাস পর গতকাল সোমবার দেশে এসে পৌঁছেছে কেএসআরএম গ্রুপের জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। পণ্যবাহী জাহাজটি কুতুবদিয়ায় নোঙর করে রাখা হয়েছে। সব প্রক্রিয়া শেষ করে আইনুল হকসহ জাহাজটির ২৩ নাবিকের কাল মঙ্গলবার ঘরে ফেরার কথা রয়েছে।

এক মাস আগেও চট্টগ্রাম নগরের আসকারদীঘির পাড়ের বাসায় লুৎফে আরা বেগমের দিন কেটেছে উদ্বেগ–উৎকণ্ঠায়। গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে কেএসআরএম গ্রুপের এই জাহাজ জিম্মি করার পর তাঁর উদ্বেগ শুরু হয়েছিল। জিম্মিদশা শুরু হওয়ার পর তখন মায়ের অপেক্ষা ছিল—কখন ফোন আসবে ছেলের। আইনুল হক দস্যুদের ফাঁকি দিয়ে সপ্তাহে এক–দুবার মায়ের সঙ্গে কথা বলতেন। দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করতেন।

লুৎফে আরা বেগম বর্তমানে ছোট ছেলেকে নিয়ে আসকারদীঘির পাড়ের বাসায় থাকেন। ছোট ছেলে মাইনুল হক এবার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করেছেন। ২০০১ সালে করোনার সময় আইনুল হকের বাবা মারা যান। সে সময় আইনুল ছিলেন জাহাজে। বাবার মৃত্যুর কথা শুনে ছুটি নিয়ে বাবাকে শেষ দেখা দেখতে আসেন।

সরকারি নাবিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০১৬ সালে কেএসআরএম গ্রুপের জাহাজে যোগ দেন আইনুল হক। ৯ বছরের জাহাজি জীবনে এবারই প্রথম জিম্মিদশায় পড়েছেন আইনুল হক। জাহাজের মালিকপক্ষ মুক্তিপণ দিয়ে জাহাজসহ নাবিকদের মুক্ত করেছে। সে জন্য আইনুল হকের মা লুৎফে আরা বেগমের অনেকের কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। জাহাজের মালিক কেএসআরএম গ্রুপ, সরকারসহ যাদের প্রচেষ্টায় নাবিকসহ জাহাজ মুক্ত হয়েছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

এমভি আবদুল্লাহ সোমবার কুতুবদিয়া পৌঁছালেও এখনো লুৎফে আরা বেগমের সঙ্গে ছেলের দেখা হয়নি। ছেলে আইনুল হকসহ ২৩ নাবিক মঙ্গলবার এমভি আবদুল্লাহ থেকে ছোট জাহাজে করে  বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনালের ১ নম্বর জেটিতে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

জিম্মিদশা থেকে নাবিকেরা মুক্তি পাওয়ার প্রায় এক মাস পার হতে চলেছে। এখন প্রতিদিনই হোয়াটসঅ্যাপে ছেলের সঙ্গে কথা হয় মায়ের। তবু মায়ের মন মানে না। লুৎফে আরা বেগম বলেন, কখন দেখা হবে ছেলের সঙ্গে; অপেক্ষা যেন শেষ হতে চাইছে না।

গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে কেএসআরএম গ্রুপের এই জাহাজটি ছিনতাই করেছিল সোমালিয়ার দস্যুরা। মুক্তিপণ দিয়ে ৩৩ দিনের মাথায় ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে জাহাজটি মুক্ত হয়। এরপর জাহাজটি প্রথমে আমিরাতের আল-হামরিয়া বন্দরে পৌঁছায়। সেখানে পণ্য খালাস শেষে আরেকটি বন্দর থেকে চুনাপাথর বোঝাই করে চট্টগ্রামের পথে রওনা হয়েছিল জাহাজটি। এ হিসেবে ১৩ দিনের মাথায় জাহাজটি বাংলাদেশের জলসীমায় এসে পৌঁছাল।