তদন্ত কর্মকর্তাকে হাজির করতে অভিযোগ গঠনের পর থেকে গত ২২ বছরে ৮৮ বার তারিখ পড়ে।
২৬ বছর আগে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক যুবককে খুনের মামলার বিচার এখনো শেষ হয়নি। মূলত সাক্ষ্য গ্রহণে আটকে আছে বিচারের কাজ। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তাও সাক্ষ্য দিতে আসেন না। তদন্ত কর্মকর্তাকে হাজির করতে অভিযোগ গঠনের পর থেকে গত ২২ বছরে ৮৮ বার তারিখ পড়ে। কিন্তু তিনি হাজির হননি। ইতিমধ্যে মারা গেছেন মামলার এক আসামিও।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বলছেন, মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিতে না আসায় এটি নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। বছরের পর বছর শুধু মামলার তারিখ পড়ছে। সাক্ষী ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম ইফতেখার হোসেন। সীতাকুণ্ড থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে তিনি মামলাটি তদন্ত করেছিলেন। দেড় বছর আগে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে তিনি অবসরে যান।
জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল চট্টগ্রামে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছেন। সর্বশেষ গত ২৬ এপ্রিল ধার্য দিনে সাক্ষী না আসায় বিচার কার্যক্রম হয়নি। পরে আদালত আগামী ২৭ জুন পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল চট্টগ্রামের সরকারি কৌঁসুলি মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, মামলায় ১৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তার সাক্ষ্য আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বারবার ধার্য দিনে সাক্ষী পুলিশ কর্মকর্তাকে হাজির হতে বলা হলেও তিনি আসছেন না। যার কারণে এত বছর ধরে মামলাটি ঝুলে আছে।
পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, ১৯৯৬ সালের ২৯ জুলাই আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নুর হোসেন নামের এক যুবক ছুরিকাঘাতে খুন হন। এই ঘটনায় তাঁর আত্মীয় রায়হান উদ্দিন বাদী হয়ে মামলা করেন। তদন্ত শেষে সীতাকুণ্ড থানার তৎকালীন ওসি ইফতেখার হোসেন ১৯৯৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের বর্তমানে সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহান, রুহুল আমীন, মো. লিটন, বিজয় কুমার, দুলাল চন্দ্র নাথ, আমিনুল ইসলাম, নুরুচ্ছফা, পাপন চন্দ্র দেব নাথ ও অপু চন্দ্র নাথকে আসামি করেন। শাহজাহান ছাড়া বাকিরা সীতাকুণ্ড আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত। তাঁদের মধ্যে অপু চন্দ্র নাথ পাঁচ বছর আগে মারা যান।
পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জেরে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হলে গুরুতর আহত হন নুর হোসেন। ঘটনার পরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান তিনি। আসামিদের মধ্যে শাহজাহান, রুহুল আমিন, লিটন, বিজয় ছাড়া বাকিরা পলাতক।
জানতে চাইলে মামলার আসামি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহান গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ঘটনায় জড়িত ছিলাম না। রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে এই মামলায় জড়ানো হয়। তবে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি হোক।’
আসামিদের বিরুদ্ধে ২০০০ সালের ২৩ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শুরু হয়। এরপর শুরু হয় সাক্ষ্য গ্রহণ। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২৭ জুলাই এই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ হয়। এর মধ্যে প্রতিটি ধার্য দিনে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে হাজির হতে বলা হলেও হননি।
কেন মামলায় সাক্ষ্য দিতে হাজির হচ্ছেন না, জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা সীতাকুণ্ড থানার তৎকালীন ওসি বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত ইফতেখার হোসেন গত মঙ্গলবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি অসুস্থ থাকায় সাক্ষ্য দিতে যেতে পারছি না। আগামী ধার্য দিনে সাক্ষ্য দিতে যাব।’ এত বছরে একবারও কেন যাননি প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে একবার গিয়েছিলাম। তখন সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি।’ প্রায় ধার্য দিনে তদন্ত কর্মকর্তাকে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ডাকা হয়েছিল প্রশ্নের উত্তরে ইফতেখার হোসেন বলেন, বিভিন্ন জায়গায় বদলির কারণে অনেক সময় সমন হাতে পেতে পেতে ধার্য দিন পার হয়ে যায়।
মামলার বাদী রায়হান উদ্দিন অন্য মামলায় কারাগারে থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, বেশির ভাগ পুরোনো মামলার বাদী এখন আর মামলার খোঁজ নিতে আসেন না।