চট্টগ্রাম নগরের হাজারী লেনের সংঘর্ষ নিয়ে আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে সেযৌথবাহিনী। নগরের দামপাড়ায়
চট্টগ্রাম নগরের হাজারী লেনের সংঘর্ষ নিয়ে আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে সেযৌথবাহিনী। নগরের দামপাড়ায়

হাজারী লেনে সংঘর্ষের ঘটনায় আটক ৮০, আহত নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ধর্মীয় সংগঠন নিয়ে দেওয়া পোস্ট শেয়ার করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যৌথ বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে একদল বিক্ষোভকারীর সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে অন্তত ৮০ জনকে আটক করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টা থেকে দিবাগত রাত ৩টা পর্যন্ত নগরের কোতোয়ালি থানার হাজারী গলি ও আশপাশের এলাকায় যৌথ বাহিনীর পরিচালিত অভিযানে তাঁদের আটক করা হয়। এর আগে গতকাল সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত হাজারী গলি এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

আজ বুধবার দুপুরে নগরের দামপাড়ায় যৌথ বাহিনী এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে টাস্কফোর্সের মুখপাত্র লে. কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৮০ জনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে তাঁদের যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

লে. কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় ওসমান আলী নামক একজন ব্যক্তির ইসকনবিরোধী ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে নগরের হাজারী লেনে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং আনুমানিক ৫০০ থেকে ৬০০ জন দুষ্কৃতকারী হাজারী লেনে ওসমান আলী ও তাঁর ভাইকে হত্যা এবং দোকান জ্বালিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে জড়ো হন। স্থানীয় কন্ট্রোল রুম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের ছয়টি টহল দল ওই এলাকায় পৌঁছায়। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় জানমাল রক্ষা এবং মব জাস্টিস রোধে যৌথ বাহিনী ওসমান আলী ও তাঁর ভাইকে ওই এলাকা থেকে উদ্ধার করে। উত্তেজিত জনতাকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধানের বিষয়টি আশ্বস্ত করা সত্ত্বেও এক পর্যায়ে উগ্র বিশৃঙ্খলাকারী ব্যক্তিরা আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। দুর্বৃত্তরা এ সময় যৌথ বাহিনীর ওপর অতর্কিতভাবে জুয়েলারির কাজে ব্যবহৃত অ্যাসিড হামলা চালান। ভারী ইটপাটকেলসহ ভাঙা কাচের বোতল ছুড়তে শুরু করেন। এতে সেনাবাহিনীর ৫ সদস্যসহ ১২ পুলিশ সদস্য আহত হন। সেনাবাহিনীর পাঁচ সদস্যকে বর্তমানে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, চট্টগ্রামে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে দুর্বৃত্তরা ইট ছুড়ে সেনাবাহিনীর একটি পিকআপ ভ্যানের উইন্ডশিল্ড ভেঙে ফেলেন।

লে. কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ আরও বলেন, উদ্ধার অভিযানের পর দুর্বৃত্ত শনাক্তকরণে যৌথ বাহিনীর ১০টি টহল দল গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাজারী লেন এলাকায় গেলে লুকিয়ে থাকা দুষ্কৃতকারী ব্যক্তিরা পুনরায় যৌথ বাহিনীর ওপর অ্যাসিডসদৃশ বস্তু ছুড়তে শুরু করেন। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে ৮০ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করা হয়। বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত দুষ্কৃতকারী ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণের প্রক্রিয়া চলমান। আটক করা ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট থানায় প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদসহ যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালতে হস্তান্তরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং হাজারী গলিসহ নগরের অন্যান্য এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

বর্তমানে হাজারী লেনের মার্কেটগুলো বন্ধ রয়েছে কেন, তা জানতে চাইলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে লে. কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ঘটনাস্থল থেকে তদন্তের স্বার্থে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হচ্ছে। বিশেষ করে অ্যাসিডের। এ জন্য ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করা হলে তাঁরা দোকান বন্ধ রাখেন। যত দ্রুত সম্ভব তদন্তের কাজ শেষে হলে খুলে দেওয়া হবে।

এর আগে চট্টগ্রামে বড় সমাবেশ করে বিভিন্ন উসকানিমূলক স্লোগান দেওয়া হয়েছে, তাঁদের চিহ্নিত করা হয়েছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে লে. কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, শান্তিশৃঙ্খলা যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য যৌথ বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। উসকানিদাতাদের চিহ্নিতের কাজ চলছে। তাঁদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই জানিয়ে তিনি বলেন, তাঁদের পরিচয় তাঁরা দুষ্কৃতকারী।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মেজর মোহাম্মদ রিজওয়ানুর রহমান, নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী মো. তারেক আজিজ, র‍্যাব-৭–এর সহকারী পরিচালক মো. সাইফুল্লাহ, বিজিবি ব্যাটালিয়ন-৮ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মফিজুল ইসলাম ও আনসার কমান্ড্যান্ট ব্যাটালিয়ন চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক পারভীন সুলতানা।

এদিকে আজ দুপুরে নগরের হাজারী গলির প্রবেশমুখ টেরিবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গলির প্রধান ফটক বন্ধ। সামনে কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিরাপত্তায় রয়েছেন। ভেতরে দোকানপাট সব বন্ধ। আশপাশে বিভিন্ন লোকজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

হাজারী লেন ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির যুগ্ম সম্পাদক সুরেশ বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে বহিরাগত ব্যক্তিরা মিশে গেছেন। যৌথ বাহিনীর ওপর হামলা ও অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এখানে প্রায় এক হাজার ওষুধের পাইকারি ও খুচরা দোকান এবং দুই হাজারের বেশি কারখানাসহ সোনার দোকান রয়েছে। তদন্তের অংশ হিসেবে আলামত সংগ্রহ শেষ করে যত দ্রুত সম্ভব দোকানপাট খুলে দিলে ব্যবসায়ীদের উপকার হয়।